পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ৩৪ ]

করিতে বসিলেন। মনের ধর্ম্মই এই, যখন এক বিষয়ে মগ্ন থাকে তখন সে বিষয়টি হঠাৎ ভুলিয়া আর একটি বিষয়ে প্রায় যায় না। এই কারণে গৃহিণী আহ্ণিক করিতে বসিয়াও আহ্ণিক করিতে পারিলেন না। এক২ বার যত্ন করেন জপে মন দি, কিন্তু মন সেদিকে যায় না। মতির কথা মনে উদয় হইতে লাগিল —সে যেন প্রবল স্রোত, কার সাধ্যি নিবারণ করে। কখন২ বোধ হইতে লাগিল তাহার কয়েদ হুকুম হইয়াছে —তাহাকে বাঁধিয়া জেলে লইয়া যাইতেছে, তাহার পিতা নিকটে দাঁড়াইয়া আছেন, দুঃখেতে ঘাড় হেঁট করিয়া রোদন করিতেছেন। কখন বা জ্ঞান হইতেছে পুত্র নিকটে আসিয়া বলিতেছেন, মা আমাকে ক্ষমা কর —আমি যা করিয়াছি তা করিয়াছি আর আমি কখন তোমার মনে বেদনা দিব না, আবার এক একবার বোধ হইতেছে যে মতির ঘোর বিপদ উপস্থিত, তাহাকে জন্মের মত দেশান্তর যাইতে হইবেক। গৃহিণীর চটক ভাঙিয়া গেলে আপনা আপনি বলিতে লাগিলেন —এ দিনের বেলা— আমি কি স্বপ্ন দেখিতেছি? না— এ তো স্বপ্ন নয়, তবে কি খেয়াল দেখিলাম? কে জানে আমার মনটা আজ্ কেন এমন হচ্চে। এই বলিয়া চক্ষের জল ফেল্‌তে২ ভূমিতে আস্তে২ শয়ন করিলেন।

 দুই কন্যা মোক্ষদা ও প্রমদা ছাতের উপর বসিয়া মাথা শুকাইতে ছিলেন।

 মোক্ষদা। ওরে প্রমদা। চুলগুলা ভাল করে এলিয়ে দে না, তোর চুল গুলা যে বড় উষ্কখুষ্ক হয়েছে! না হবেই বা কেন? সাত জন্মে তো একটু তেল পড়ে না—মানুষের তেলে-জলেই শরীর, বার মাস রুক্ষু নেয়ে২ কি একটা রোগনারা করবি? তুই এত ভাবিস্ কেন? ভেবে২ যে দড়ি বেটে গেলি।