পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ৫৩ ]

করেন ঐ আলোটা কোন নৌকার আলো হইবে— কিয়ৎ ক্ষণ পরেই একখানা নৌকা দৃষ্টিগোচর হয়, তাহাতে মনে করেন এ নৌকা বুঝি ঘাটে আসিয়া লাগিবে— যখন নৌকা ভেড়২ করিয়া ভেড়ে না— বরাবর চলে যায়, তখন নৈরাশ্যের বেদনা শেলস্বরূপ হইয়া হৃদয়ে লাগে। রাত্রি প্রায় শেষ হইল—ঝড় বৃষ্টি ক্রমে২ থামিয়া গেল। সৃষ্টির অস্থির অবস্থার পর স্থির অবস্থা অধিক শোভাকর হয়। আকাশে নক্ষত্র প্রকাশ হইল—চন্দ্রের আভা গঙ্গার উপর যেন নৃত্য করিতে লাগিল ও পৃথিবী এমত নিঃশব্দ হইল যে, গাছের পাতাটি নড়িলেও স্পষ্টরূপ শুনা যায়। এইরূপ দর্শনে অনেকেরই মনে নানাভাবের উদয় হয়। গৃহিণী এক২ বার চারিদিকে দেখিতেছেন ও অধৈর্য্য হইয়া আপনা আপনি বলিতেছেন —জগদীশ্বর! আমি জানত কাহারো মন্দ করি নাই— কোনো পাপও করি নাই—এতকালের পর আমাকে কি বৈধব্য-যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে? আমার ধনে কাজ নেই—গহনার কাজ নাই— কাঙালিনী হইয়া থাকি সেও ভাল— সে দুঃখে দুঃখ বোধ হইবে না কিন্তু এই ভিক্ষা দেও যেন পতি-পুত্রের মুখ দেখ্‌তে২ মরিতে পারি। এইরূপ ভাবনায় গৃহিণীর মন অতিশয় ব্যাকুল হইতে লাগিল। তিনি বড় বুদ্ধিমতী ও চাপা মেয়ে ছিলেন, আপনি রোদন করিলে পাছে কন্যারা কাতর হয়, এ কারণে ধৈর্য্য ধরিয়া রহিলেন। শেষ রাত্রে বাটীতে প্রভাতী নহবত বাজিতে লাগিল। ঐ বাদ্যে সাধারণের মন আকৃষ্ট হয় সত্য কিন্তু তাপিত মনে ঐরূপ বাদ্য দুঃখের মোহনা খুলিয়া দেয়, এ কারণ বাদ্য শ্রবণে গৃহিণীর মনের তাপ যেন উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল। ইতিমধ্যে একজন জেলিয়া বৈদ্যবাটীর বাটীতে মাছ বেচতে আসিল; তাহার নিকট অনুসন্ধান করাতে সে বলিল ঝড়ের সময় বাঁশবেড়ের চড়ার