পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ৫৯ ]

 অনেকেরই বোধ হইয়াছিল পুলিশের ব্যাপার নিষ্পন্ন হওয়াতে মতিলাল সুযুত হইয়া আসিবে। কিন্তু যে ছেলের মনে কিছুমাত্র সৎসংস্কার জন্মে নাই ও মান বা অপমানের ভয় নাই তাহার কোন সাজাতেই মনের মধ্যে ঘৃণা হয় না। কুমতি ও সুমতি মন থেকে উৎপন্ন হয় সুতরাং মনের সহিত তাহাদিগের সম্বন্ধ—শারীরিক আঘাত অথবা ক্লেশ হইলেও মনের গতি কিরূপে বদল হইতে পারে? যখন সারজন মতিলালকে রাস্তায় হিঁচুড়িয়া টানিয়া লইয়া গিয়াছিল তখন তাহার একটু ক্লেশ ও অপমান বোধ হইয়াছিল বটে কিন্তু সে ক্ষণিক—বেনিগারদে যাওয়াতে তাহার কিছুমাত্র ভাবনা বা ভয় বা অপমান বোধ হয় নাই। সে সমস্ত রাত্রি ও পরদিবস গান গাইয়া ও শেয়াল-কুকুরের ডাক ডাকিয়া নিকটস্থ লোকদিগকে এমত জ্বালাতন করিয়াছিল যে, তাহারা কাণে হাত দিয়া রাম২ ডাক ছাড়িয়া বলাবলি করিয়াছিল—কয়েদ হওয়া অপেক্ষা এ ছোঁড়ার কাছে থাকা ঘোর যন্ত্রণা। পরদিবস ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাঁড়াইবার সময় বাপকে দেখাইবার জন্য শিশু পরামাণিকের ন্যায় একটুকু অধোবদন হইয়াছিল কিন্তু মনে মনে কিছুতেই দৃকপাত হয় নাই—জেলেই যাউক আর জিঞ্জিরেই যাউক কিছুতেই ভয় নাই।

 যে সকল বালকদের ভয় নাই—ডর নাই—লজ্জা নাই—কেবল কুকর্ম্মেতেই রত—তাহাদিগের রোগ সামান্য রোগ নহে—সে রোগ মনের রোগ। তাহার উপর প্রকৃত ঔষধ পড়িলেই ক্রমে ক্রমে উপশম হইতে পারে। কিন্তু ঐ বিষয়ে বাবুরাম বাবুর কিছুমাত্র বোধ শোধ ছিল না। তাঁহার দৃঢ় সংস্কার ছিল মতিলাল বড় ভাল ছেলে, তাহার নিন্দা শুনিলে প্রথম২ রাগ করিয়া উঠিতেন—কিন্তু অন্যান্য লোকে বলিতে ছাড়িত না, তিনি ও শুনিয়ে শুনিতেন না। পরে