পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি

 খাকি সাদিকে দরমার বীপে একটা ইদুরের গর্ত দেখিয়ে বলছে, “যেমনি ঘণ্টা পড়বে, আর অমনি সে ওই গর্তটায় চোখ দিয়ে...”

 এমন সময় পায়রা ডাক দিলে, খুব নরম করে, মিষ্টি করে, “দুধি-ভাতি সাদি সাহাজাদী, ও সফেদি।”

 এবার সাদি সাড়া দিলে, “নীলের বড়ি, নীল পোখরাজ। কী বলবে বলো।”

 পায়রা খুব খানিক গলা ফুলিয়ে গদগদ সুরে বললে, “যদি একবার, একটিবার, বলব তবে —শুধু একটিবার যদি দেখাও...”

 খাকি, সুরকি, গুলজারি সব মুরগি ইতিমধ্যে সেখানে জুটেছিল। তারা সবাই সাদির সঙ্গে বলে উঠল, “কী, কী, কী, কী দেখাব।”

 পায়রা অনেকখানি ঢোক গিলে বললে, “তাঁর মাথার মোরগফুলটি যদি একটিবার...”

 সব মুরগি হেসে এ-ওর গায়ে ঢলে পড়ে বলতে লেগেছে, “চায় লা, চায় লা, দেখতে চায়, দেখতে চায়।”

 পায়রা বলছে, “দেখবই দেখব, দেখবই দেখব,” আর আলসের উপর গলা ফুলিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।

 সাদা মুরগি তাকে ধমকে বললে, “অত ব্যস্ত কেন। আলসেটা ভাঙবে নাকি।”

 পায়রা ডান চুলকে বললে, “না, না, তবে কিনা আমরা তাঁকে ছেরেদ্ধা করে থাকি..”

 সাদি বুক ফুলিয়ে বলে উঠল, “ছেরেদ্ধা কে না করে।”

 খোপ ছেড়ে আসবার সময়, কবুতনিকে সে ফিরে এসে যে জগদ্‌বিখ্যাত পাহাড়তলির কুঁকড়োর রূপ-বর্ণনা শুনিয়ে দেবে, দিব্যি করে এসেছে, সাদিকে পায়রা সে কথা বলে নিলে। সাদি ইতিমধ্যে আবার ধান খুটতে লেগেছিল, সে পায়রার কথার উত্তর দিলে, “চমৎকার, দেখতে চমৎকার, এ কথা সবাই বলবে।”

 পায়রা বলছিল, কতদিন খোপের মধ্যে বসে তারা ফুটিতে তাঁর ডাক শুনেছে, নীল আকাশ ভেদ করে আসছে, সোনার সূচের মতো ঝকঝকে সেই ডাক, আকাশ আর মাটিকে যেন বিনি সুতোর মালাখানিতে বেঁধে এক ক’রে দিয়ে।