পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি

 কুঞ্জলতার আড়ালে বেড়ার গায়ে ভাঙা খাচায় তাল-চড়াই এদিক-ওদিক করছিল, হঠাৎ বলে উঠল, “ঠিক, ঠিক, সবারি প্রাণ তার জন্তে ছটফটায়।”

 এক মুরগি বলে উঠল, “কার কথা হচ্ছে, আমাদের কুঁকড়োর নাকি।”

 চড়াই বলে উঠল, “কুঁকড়ো কি শুধু তোদেরই না তোরাই শুধু তার। তুই মুই সেই, তোরা মোরা তারা, তোদের মোদের তাদের, সবাই তার, সে সবার।”

 কিছু দূরে গোবদামুখো পেরু বসে বসে এই-সব কথা শুনছিল, এখন আস্তে আস্তে পায়রার কাছে এসে, কুঁকড়ো যে এল ব'লে এবং এখনি যে সে তার চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করে কুঁকড়োকে দেখে জীবন সার্থক করতে পারবে, এই কথা খুব ঘটা করে জানিয়ে দিলে। পায়রা বললে, “পেরু মশায়, আপনিও তাকে চেনেন?”

 পেরু গলার থলিট দুলিয়ে বলে উঠল, “আমি চিনি নে! কুঁকড়োকে জন্মাতে দেখলেম, সেদিন।”

 কুঁকড়োর জন্মস্থানটা দেখবার জন্যে পায়রা ভারি ব্যস্ত হয়ে উঠল। পেরু তাকে একটা পুরোনো বেতের পেটরা দেখিয়ে বললে, “এইখানে কুঁকড়োর জন্ম হয় কর্কট রাশিস্থে ভাস্করে, মুক্তোর মতো এক ডিম থেকে।” যে মুরগি এই ডিমে তা দিয়েছিলেন, তিনি এখনো বর্তমান কিনা, শুধোলে পেরু পায়রাকে বললে, “এই পেটরার মধ্যেই তিনি আছেন, এখন বৃদ্ধ হয়েছেন, বড়ো একটা বাইরে আসেন না, কেবলই ঝিমোচ্ছেন, কুঁকড়োর কথা হলেই যা এক-একবার চোখ মেলেন।” ব'লেই পেরু সেই পেটরার কাছে মুখ নিয়ে বললে, “শুনছ গিন্নি, তোমার কুঁকড়োর এখন খুব বাড়-বাড়ন্ত”—বলতেই পেটরার ডালা ঠেলে বুড়ি মুরগি হেঁয়ালিতে জবাব দিলে, “পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে গো, ভাতে বাড়ে।” জবাব দিয়েই বুড়ি পেটরার মধ্যে মুড়িসুড়ি দিয়ে লুকিয়ে পড়ল।

  পেরু বলে উঠল, “আমাদের গিন্নি হেঁয়ালি বলতে খুব মজবুত, মুখে মুখে হেঁয়ালি জুগিয়ে বলতে এঁর মতো দুজন দেখা যায় না। কলির বিষ্ণুশর্মার অবতার কিম্বা চাণক্য পণ্ডিতাও বলতে পারে।” অমনি পেটরার মধ্যে থেকে জবাব হল, “ময়ুর গেলেন লেজ গুড়িয়ে, পেরু ধরলেন পাখা।” “দেখলে, দেখলে” বলতে বলতে পেরু সেখান থেকে সরলেন।