পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি

“আ-লো। অ-লো। অ-লো।” তার পর তাঁর বুকের মধ্যে থেকে যেন সুর উঠল,“অতু-ল ফু-উ-ল। আলোর ফুল! আলো— প্রাণের ফুলকি আলো, চোখের দৃষ্টি আলো, এসে ফুলের উপর দিয়ে, শিশির মুছে দিয়ে, এসো পাতায়-লতায় ফুলে ঝিক্‌মিক। আলোতে ঝিক্‌মিক— দেখা দিক, সব দেখা দিক, ভিতরে যাক তোমার প্রভা, বাইরে থাক্ তোমার আভা, একই আলো ঘিরে থাক্‌ শত দিক শতধারে, অনেক আলোর এক আলো, অনেক ছেলের এক মা। তোমার স্তুতি গাই আলোকবাদিন, আলোকের স্তোতা। তোমায় দেখি ছোটো হতে ছোটো, বড়ো হতে বড়ো, নানাতে, নানা কালে— কাচে, মানিকে, মাটিতে, আকাশে, জলে-স্থলে; সকালে জ্বলজ্বল, সন্ধ্যায় ঝিলমিল, মন্দিরে, কুটিরে, পথে বিপথে। ভিখারীর কাঁথার শোভা,রাজার পতাকায় প্রভা— আলো। বনের তলায় সোনার লেখা, সবুজ ঘাসে সোনার চুমকি, আলোর ফুলকি, আলপনা অ-তু-উ-ল অমূল আলো।”

 আর-সব পাখি যে-যার কাজে ব্যস্ত ছিল, কেউ ধান খুঁটছিল কেউ গা ঝাড়ছিল,গুলজারি করছিল কিচমিচ, সুরকি মাখছিল ধুলো, খাকি ঘাঁটছিল ছাইপাঁশ, কালি খুঁড়ছিল গর্ত, সাদি মাজছিল গা, পেরু বকছিল বকবক, চড়াই বলছিল ছি-ছি, কেবল সেই আকাশের মতো নীল পায়রা অবাক হয়ে শুনছিল—

জয় জয় আলোর জয়।

 পায়রা আর স্থির থাকতে পারলে না, গলা কাঁপিয়ে দুই ডানা ঝটপট করে বলে উঠল, “সাধু সাধু।” কুঁকড়ো আঙিনায় নেমে পায়রাকে দেখে বললেন, “ধন্যবাদ হে অচেনা পাখি, এখনি কি যাওয়া হবে।”

 পায়রা বললে, “আপনার দর্শন পেয়ে কৃতার্থ হয়েছি, এখন ঘরে গিয়ে কপোতীকে আপনার আশীর্বাদ দিয়ে চরিতার্থ হই।” কপোতনীর প্রবালের মতো রাঙা পায়ে নমস্কার জানিয়ে কুঁকড়ো কবুতকে বিদায় করলেন। পায়রা তাল-চড়াইয়ের ভাঙা খাঁচায় ডানার এক ঝাপটা মেরে গায়ের দিকে উড়ে গেল।

 চড়াইটা গজগজ করতে লাগল, “সুঁড়ির জয় মাতালে কয়।” কুঁকড়ো ডাক দিলেন, “কাজ ভুলো না, কাজ ভুলো না।” আর অমনি রাজহাঁস সে আর চুপচাপ বসে রইল না,