পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
আলোর ফুলকি

মেয়েদের মতো সব মুরগি একসঙ্গে বলে উঠল, “আগে যায়।” কুঁকড়ো হুকুম দিলেন, “যা— ও।” মুরগির যাচ্ছিল, কুঁকড়ো তাড়াতাড়ি তাদের ডেকে সাবধান করে দিলেন, “সড়ক পার হবার সময় রাস্তায় কী আছে, তা খুঁটে নেবার চেষ্টা করা ভুল, গাড়িচাপা পড়তে পার।”

 মুরগিরা ভালোমানুষের মতো বেড়ার ফাঁকটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কুঁকড়ো চারি দিক দেখে বললেন, “তুই তিন চার, সিধে হও পার।” ঠিক সেই সময় দূরে মটরগাড়ির ভেঁপু বাজল, “হাউ মাউ— খাউ।” কুঁকড়োর অমনি সাড়া পড়ল— ভেঁপুর চেয়ে জোর আওয়াজ— ‘স বু-উ-উ-র। বেড়ার ধার দিয়ে সাঁ-করে খানিক ধুলো আর ধোঁয়া গড়াতে গড়াতে চলে গেল। মিনিট কতক পরে যখন সব পরিষ্কার হল, তখন কুঁকড়ো মুরগিদের যাবার পথ ছেড়ে একপাশে সরে দাঁড়ালেন। একে একে মুরগির চলল, সাদি খাকি গুলজারি। সুরকি সব-শেষে। সে কুঁকড়োকে বলে গেল, “কাব্যাৎ, যা-খাই তাতেই আজ তেল-তেল গন্ধ করছে, যেন তেলাকুচোর তেলফুলুরি।” বাপির আড়ালে খাকি মুরগি, সে মনে মনে বললে, রক্ষে, তিনি আমাকে দেখেন নি, বাঁচলেন বাপু।

সাদি, কালি, গুলজারি— এরা সবাই সেটা জানবার জন্য ধরাধরি করছে। পায়রা থেকে চড়াই এমন-কি, টিকটিকি পর্যন্ত পাহাড়তলির এ-পাড়া ও-পাড়ার ছেলেবুড়ো যে যেখানে আছে, সবাই যে লুকোনো জিনিসের কথা বলাবলি করছে, কুঁকড়ো সেই লুকোনো জিনিসের খবরটা বুকের মধ্যে নিয়ে বসে আছেন; কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারেন না, অথচ না বললেও বুক যে ফেটে যায়। অতি গোপনীয় বীজমন্ত্রটি যার কানে চুপিচুপি বলে দেওয়া চলে, এমন উপযুক্ত পাত্র— সে কোথা। এ যে অতি গোপন কথা, অতি নিগুঢ় রহস্য। মেয়ের তো এ কথা একটি দিন চেপে রাখতে পারবে না। বিশেষত সাদি কালি মুরকি আর খাকি এমনি সব গুলবাহারি গুলজারি, যাদের মুখ চলছেই, তাদের এ কথা একেবারেই বলা যেতে পারে না, শোনবার জন্যে তাঁরা যতই ইচ্ছুক থাকুক-না কেন। না, বুক ফেটে