পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
১৩

যায় যাক, মনের কথা মনেই থাক্‌, গুপ্ত মন্তর, অন্তরের ভাবনা মন থেকে দূর করে যেমন আর সবাই, তেমনি আমিই বা কেন না থাকি— দিব্যি আরামে, পাহাড়তলির রাজবাহাদুর কুঁকড়ো। এইটুকুই যথেষ্ট, আর এইটুকুতেই আমার আনন্দ, কিমধিকমিতি। মনে মনে এই তর্কবিতর্ক করতে করতে বুক ফুলিয়ে কুঁকড়ো ধানের মরাইটার চার দিকে পা-চালি করছেন, আর এক-একবার নিজের দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে নিজেকে নিজে তারিফ করছেন, ‘ক্যা খপ্‌ -সু রতি ই-ই’। তাঁর মাথার মোরগফুলটা আর চোখের কোল থেকে ঝুলছে যে দাড়ি, তার মেহেদি রঙটা যে বনের টিয়া থেকে আরম্ভ করে লাল তুতির লালকেও হার মানিয়েছে, এটা কুঁকড়োকে আর বুঝিয়ে দিতে হল না। তিনি খড়ের গাদার উপরে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে একবার, মাঠের দিকে একবার, তাকিয়ে দেখলেন; সোনা আর মানিকের আভায় জল স্থল আকাশ রাঙিয়ে সন্ধ্যাটি কী চমৎকার সাজেই সেজে এসেছে। “আজকের মতো দিনের শেষ কাজ সাঁঝি-আলপনা দেওয়া হল, আজ করবার যা, তা সারা হয়েছে, কালকের চিন্তা কাল হবে, এখন আর কী, দুমুঠো যা জোটে, খেয়ে নিতে ছু-টি-ই-ই।” বলেই কুঁকড়ো একটিবার ডাক দিয়ে চালাঘরের মটকা থেকে নেমে বাসার দিকে দৌড়ে যাবেন, ওদিক থেকে শব্দ এল, 'রও-ও-ও'! উঠানের মধ্যে শুকনো ঘাসের বোঝাটা একবার খসখস করে উঠল, আর তার তলা থেকে জিম্মা কুত্তানী খড় আর কুটোয় ঝাঁকড়া মাথাটা বের করে জুলজুল করে কুঁকড়োর দিকে চাইতে লাগল।

 কুঁকড়ো আর কুকুরের চেহারায় মিল না হলেও নামে নামে যেমন কতকটা, কাজেওতেমনি অনেকটা মিল ছিল। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন দুজনেরই জীবনের ব্রত। কাজেই দুজনে যে ভাব খুবই হবে, তার আশ্চর্য কী। তা ছাড়া সূর্য আর মাটি হয়েরই পরশ দুজনেরই ভালো লাগে। এই আকাশের আলো আর পৃথিবীর উপর ভালোবাসা এই দুটি জীবকে যেন একসূত্রে বেঁধেছে। সূর্যের দিকে মুখ করে মাটির কোলে দুই পা রেখে না দাঁড়ালে কুঁকড়োর গান মোটেই খোলে না; আর কুকুর তার আনন্দই হয় না, রোদে মাটির উপরে একএকবার না গড়িয়ে নিলে। জিন্মা প্রায়ই বলে, “সূর্যকে ভালোবাসে বলেই না সে চাঁদ দেখলেই তাড়া করে যায়, আর মাটিকে ভালোবাসে বলেই না সে গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে