পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
আলোর ফুলকি
right

না, সে তো তুমিও জানো জিন্মা।”

 জিম্মা ভারি বিরক্ত হয়ে বলে উঠল, “শোনো একবার, কথার ভাঁওরাটা শোনো। বাইরের বনে সোনার আলো, ফুলের মধু থাকতে যে পাখিটা দরজা-ভাঙা খাঁচায় বসে বাসি ছাতু খেয়ে পেট ভরাচ্ছে, তার কাছে পরিষ্কার জবাব আশা করাই ভুল।”

 চড়াই বলে উঠল, “সাধ করে কি আমি খাচায় বাসা বেঁধেছি। বাইরে সোনার আলো আর সোনালি মধু সময়ে সময়ে যে শীসের গরম-গরম ছররা গুলি হয়ে দেখা দেয় দিদি।”

 জিন্মা ভারি চটেছিল। উত্তর করলে, “আরে মুখখু, কোন্‌দিন কবে একটা-আধটা কার্তুজের খোলা ঢেলার মতো খুরে লাগল বলে বনের হরিণ সে কি কোনোদিন বনের থেকে তফাত থাকতে চায়, না আকাশে বাজ আছে বলে কেউ আকাশের আলোটা আর আকাশে ওড়াটা অপছন্দ করে। ভাঙা খাঁচার পুষ্যিপুত্তর হরবোলা। ফুলে-ফলে আলোতে-ছায়ায় অতি চমৎকার বনে-উপবনে যে মুক্তি, তুই তার কী বুঝবি।”

 চড়াই উত্তর দিলে, “বেঁচে থাক্ আমার ভাঙা খাচার দাঁড়খানি। কাজ নেই আমার মুক্তিতে। রাজার হালে আছি, পরিষ্কার কলের জল খাচ্ছি, মস্ত সাবানদানিতে দুবেলা গরমের দিনে নাইতে পাচ্ছি, দোলনা চৌকি, চানের টব বনে এ-সব পাই কোথা, বলে তো দিদি।”

 জিন্মা এমন রেগেছিল যে, গলার শিকলিট খোলা পেলে সে আজ চড়াইটার গায়ের একটি পালকও রাখত না, মেরেই ফেলত।

 এই ব্যাপার হচ্ছে, এমন সময় বাড়ির মধ্যে ঘড়ি বাজল, ‘পি-উ'।

 যেমন ‘পিউ' বল, অমনি খাকি মুরগি ঝুড়ির আড়াল থেকে বেরিয়ে সেদিকে দৌড়। গর্তের মধ্যে মুখ দিয়ে সে কিন্তু কিছুই দেখতে পেলে না; এবারও তার আশা পুরল না, সময় উতরে গেছে, পিউ-পাখি পালিয়েছে।

 চড়াই খাকিকে বললে, “কী দেখছ গো। এক-পহরের ঘড়ি পড়ল নাকি।”

 কুঁকড়ো খাকিকে গোলাবাড়িতে দেখে অবাক হয়ে বললেন, “তুই যে চরতে যাস নি?”

 খাকি চমকে উঠে ঘাড় ফিরিয়ে ডানার ঘোমটায় মুখ ঝাঁপলে।

 কুঁকড়ো শুধোলেন, “গর্তটার মধ্যে মুখ গুঁজড়ে হচ্ছিল কী, শুনি।”