পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ডালকুত্তোটা মাঠের ওপারে চলে গেছে। কুঁকড়ো সবাইকে অভয় দিয়ে ঘরের মটকা থেকে হাঁক দিলেন, “ত-ত-তফাত গিয়া।” অমনি সে-মোনালিয়া বাক্সের মধ্যে থেকে বেরিয়ে উঠোনময় নেচে বেড়াতে লাগল যেন আলোর চরকিবাজি। কুঁকড়ে তার সেই ঝকঝকে রূপ দেখে ভারি খুশি হয়ে মনে মনে বললেন, ‘আহ, এমন পাখিকেও কেউ গুলি করে। এর দিকে বন্দুক করা, আর একটি মানিকের পিদুমে তাগ করা একই।’ মোনালির কাছে আস্তে আস্তে এসে কুঁকড়ো শুধোলেন, “সূর্যের আলোর মতো কোন্‌ পুব-আকাশের সোনার পুরীথেকে তুমি এলে সোনালিয়া বনমুরগি।”

 মোনালি মাখমের মতো নরম স্বরে বললে, “আমি ওই বনে আছি বটে কিন্তু ওটা তো আমার দেশ নয়।” কুঁকড়ো তার সবচেয়ে মিষ্টি স্বরে শুধোলেন, “তবে কোথায় তোমার দেশ সোনালিয়া বিদেশিনী।” মোনালি উত্তর করলে, “তা তো মনে নেই। শুনেছি বরফের পাহাড়ের ওপারে যে-দেশ, সেখানকার মাটি ফুল-কাটা গালচেতে একেবারে ঢাকা, সেইখানের কোন অশোক বনের রানীর মেয়ে আমি। আমার একটু একটু স্বপ্নের মতো মনে পড়ে— চমৎকার নীল আকাশের তলায় বড়ো বড়ো গাছের ছাওয়ায় সখীদের সঙ্গে খেলে বেড়াচ্ছি অশোক বনের দুলালী। আমাদের ঘরের চারি দিকে কত রঙের ফুল ফুটেছে, ভোমরা সব উড়ে উড়ে পদ্মের মধু খেয়ে যাচ্ছে। কেবল পাখি আর প্রজাপতি আর ফুল। একটাও শিকারী ডালকুত্তো নেই। মানুষরা পর্যন্ত সেখানে আমাদের মতো চমৎকার সব রঙিন সাজে সেজে রাজা-রানীর মতো বেড়িয়ে বেড়াচ্ছে। নন্দন-কাননে আনন্দে ঘুরে বেড়াতেই আমি জন্মেছি, ডালকুত্তোর তাড়া খেয়ে ছুটোছুটি করে মরতে তো নয়। আহা, সেখানকার সূর্যের লাল আভা রক্ত-চয়ন আর কুসুম-ফুলের রঙে মিশিয়ে বুকে মেখে রেখেছি, এই দেখো।” ব'লে সোনালিয়া কুঁকড়োর গা-ঘেঁষে দাড়াল। কুঁকড়ো আনন্দে ডগমগ হয়ে ঘাড় ছলিয়ে ডানা কাঁপিয়ে তালে তালে পা ফেলে সোনালিয়ার চারি দিকে খানিক নৃত্য করে আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে বললেন, “মনো মোনালিয়া। শোনো সোনালিয়া বিদেশিনী বনের টিয়া—” হঠাৎ মোনালি বলে উঠল, “ইস্।”