পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
২৩

চড়াই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর করলে, “বড়ে কঠিন কাজ, নিজের ধন্ধায় ফিরছেন ইনি, পাছে কেউ উপর-চাল চেলে টেক্কা দেয়।” -

 সোনালিয়া বললে, “হ্যাঁ কাজটা শক্ত বটে, কিন্তু অতি ছোটো।”

 কুঁকড়ো অন্য কথা পেড়ে সোনালিয়াকে চুন-খসা দেয়ালের ধারে পুরোনো জাতাটা দেখিয়ে বললেন, “ওই পাঁচিলটার উপরে দাড়িয়ে আমি যখন গান করি তখন সোনালী রঙের গিরগিটিগুলো দেয়ালের গায়ে চুপ করে বসে শোনে। মনে হয় যেন ওই জাতার মোট পাথর খানাও দেয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে বসে-বসে আমার গান শুনছে। এইখানটিতে আমি গান গাই, এইখানের মাটি আমি পরিষ্কার করে আঁচড়ে রেখেছি। আর এই যে পুরোনো লাল মাটির গামলা, গানের পূর্বে ও পরে প্রতিদিন এরি থেকে এক চুমুক জল না খেলে আমার তেষ্টাও ভাঙে না, গলাও খোলে না।” সোনালিয়া একটু হেসে বললে, “তোমার গলা খোলা না-খোলায় বুঝি খুব আসে যায় তোমার বিশ্বাস।”

 “অনেকটা আসে যায় সোনালি।” গম্ভীরভাবে কুঁকড়ো বললেন।

 “কী আসে যায় শুনি?” সোনালিয়া নাক তুলে বললে।

 কুঁকড়ো বললেন, “ওই গোপন কথাটা কাউকে বলবার সাধ্য আমার নেই।”

 “আমাকেও না?” কুঁকড়োর দিকে এগিয়ে এসে অভিমানের সুরে সোনালিয়া বললে, “আমি যদি বলতে বলি, তবুও না?”

 কুঁকড়ো কথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে সোনালিকে এক বোঝা কাঠ দেখিয়ে বললেন, “আমাদের প্রিয়বন্ধু, রান্নাঘরে শ্মশানে চ, ইনি চালা কাঠ।” “এ যে আমার বন থেকে চুরি করা দেখছি।” বলে সোনালিয়া আবার শুধোলে, “তবে তোমারও একটা গুপ্ত মন্তর আছে।”

 “হ্যাঁ বন-মুরগি। এই কথাটা কুঁকড়ো এমনি সুরে বললেন যে সোনালিয়া বুঝলে গোপন কথাটা জানবার চেষ্টা এখন বৃথা।

 কুঁকড়ো সোনালিকে নিয়ে গোলাবাড়ির বাইরের পাঁচিলে উঠলেন। সেখান থেকে তিনি দেখালেন দূরে পাহাড়ের গা বেয়ে জলের মতো সাদা একটা সরু সাপ কতদিন ধরে যে নামছে তার ঠিক নেই।