পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
২৫

ছোটো কোণটিতে চুপচাপ বসে থেকেও যে সবই খুব বড়ো করে দেখা যায় আজ সোনালি সেটি বুঝে অবাক হল।

 কুঁকড়ো বললেন, “সব জিনিসকে যদি তেমন করে দেখতে পার তবে সুখদুঃখের বোঝা সহজ হবে; অজানা আর কিছু থাকবে না। ছোটো একটি পোকার জন্ম-মরণের মধ্যে পৃথিবীর জীবন আর মৃত্যু ধরা রয়েছে দেখো, একটুখানি নীল আকাশ ওরি মধ্যে কত কত পৃথিবী জ্বলছে নিভছে।”

 মুরগি-গিন্নি অমনি পেটরার মধ্যে থেকে গা-ঝাড় দিয়ে উঠে বললে, “কুয়োর তলে পানি, আকাশকেই জানি।” পেটরার ডালা আবার বন্ধ হবার আগেই কুঁকড়ো সোনালিকে মায়ের সঙ্গে পরিচয় করে দিলেন। মুরগি-গিন্নি চোখ মটকে চুপি চুপি বললেন, “বড়ে জবরদস্ত কুঁকড়ো, না?” -

 সোনালি মিহি স্বরে বললে, “হু, উনি খুব বিদ্বান বুদ্ধিমান।”

 এদিকে কুঁকড়ো জিন্মাকে বলছিলেন, “সোনালিয়ার সঙ্গে দুদণ্ড কথা কয়ে আরাম পাওয়া যায়, সব-বিষয়ে সে কেমন একটু উৎসাহ নিয়ে জানতে চেষ্টা করে দেখেছ।”

 এমন সময় কিচমিচ চেঁচামেচি করতে করতে মাঠ থেকে দলে-দলে হাস মুরগি ধাড়ি বাচ্ছা সবাইকে নিয়ে চিনে-মুরগি উপস্থিত। এসেই সবাই সোনালিয়াকে ঘিরে ‘আহ কী সুন্দর’ ‘ক্যাব্যাৎ’ ‘বাহবা’ ‘বেহেতর’ এমনি-সব নানা কথা বলতে লাগল। কুঁকড়ো একটু দূরে দাড়িয়ে হাসিমুখে এই ব্যাপার দেখছিলেন। কী মুন্দর দেখাচ্ছে সোনালিয়াকে। তার চলন বলন সবই বেশ কেমন একটু ভদ্দর রকমের। গোলাবাড়ির কোনো মুরগিই এমন নয়। চিনে-মুরগিরও সোনালি বউ করবার সাধ একটু যে না হয়েছিল তা নয়; সে তাড়াতাড়ি নিজের ছেলের সঙ্গে সোনালিয়ার ভাব করে দিতে দৌড়ল।

 কুঁকড়ো এইবার তার সব মুরগিদের ঘরে যেতে হুকুম দিলেন। সোনালিয়া আরো খানিক তাদের সঙ্গে গল্প করবার ইচ্ছে করায় কুঁকড়ো বললেন, “ওদের সব সকাল সকাল ঘুমনো অভ্যেস।” মুরগিরা একটু বিরক্ত হয়ে সব শুতে চলল মই বেয়ে নিজের নিজের খোপে। সোনালিয়া শুধলে, “কোথায় যাচ্ছ ভাই।”

8