পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
আলোর ফুলকি

নাকি।” পেঁচা-তিনটে জরাব দিলে, “হাঃ হাঃ হাঃ।” চড়াই খাচার মধ্যে জেগে উঠে শুনলে এক পেচা আর-এক পেঁচাকে শুধচ্ছে, “ঘোট কিসের।” অন্য পেচা বলছে, “কুঁকড়োর সর্বনাশের ঘোট রে ঘোট।” ভোদড় অমনি শুধলে, “কো-ও-থায়।” পেচারা উত্তর দিলে, “পাকুড়তলে, পাকুড়তলে, পাকুড় পাকুড় পাকুড়তলে।” ভাম শুধলে, “ক-খ-ন।” উত্তর হল, “আটটায় ঘুট। আটটায় ঘুট। আটটায় ঘুট। ঘুট ঘুটে রাতে। যুট ঘুটে রাতে।”

 রাতের আঁধারে বাহুড়গুলো জাদুকরের হাতে তাসের মতো একবার দেখা দিচ্ছিল আবার কোথায় উ যাচ্ছিল। বেড়াল পেঁচাকে শুধলে, “বাদুড় তো আমাদের দলে বটে।” পেচা বললে, “ই নিশ্চয়।” “ছু চো ইদুর?” “হঁ। তারাও।”

 বেড়াল বাড়ির দরজা আঁচড়ে বললে, “পিউ পিউ পিউ। দিয়ে পিউ আটটায় ঘড়ি দিয়ে। দিয়ে দিয়ো।” পেচা শুধলে, “ঘড়িটাও এ দলে নাকি।” বেড়াল উত্তর করলে, “নি-শ-চয়। নিশাচর সবাই এ দলে; তা ছাড়া দিনের বেলারও দু-চার জন আছেন।” পেরু আর দু-চার জন উঠোনের এককোণে লুকিয়ে ছিল, আস্তে আস্তে বেরিয়ে এল। পেরু শোধালে, “ড্যেবা চোখ, চাকা মুখ। সব ঠিক তো” উত্তর হল, অন্ধকার থেকে—“হাঃ হাঃ হঁ। সব ঠিক, ঘুটিটা ঠিক, এ পাড়া ঠিক, ও পাড়া ঠিক।” তাল-চড়াই মনে মনে বললে, ‘সেও যাচ্ছে ঠিক?

 কুকুর এমন সময় গা-ঝাড়া দিয়ে বলে উঠল, “কে ও।” অমনি সব নিশাচরগুলো চমকে উঠে এদিক ওদিক চাইতে লাগল। বেড়াল তাদের সাহস দিয়ে বললে, “ও কিছু নয়, বুড়িটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বকছে।” কিন্তু এবার কুঁকড়ে যেমন একটু গা-ঝাড় দিয়ে সাড়া দিয়েছেন, “কি-ই-ও * অমনি সব নিশাচর— পেচ, বেড়াল, এমন-কি, পেরু পর্যন্ত ‘ওইগো বলেই পালাই পালাই করতে লাগল। পেরু, তিনি পালানোই স্থির করলেন, তার গলার থলি থেকে পা পর্যন্ত ভয়ে কঁপিছিল; বেড়ালের যেন জ্বর এসে পড়ল, পেচাগুলো চোখ বুজলেই অন্ধকারে মিলিয়ে যাবে জানে, তারা অমনি খপ করে চোখের পাতা বন্ধ করে ফেললে। একসঙ্গে সব জ্বলন্ত চোখ নিভে গেল। রাত্রি যে অন্ধকার সেই অন্ধকার। কুঁকড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চড়াইকে শুধলেন, “কারা যেন ফুসফাস করছিল না।”