পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
আলোর ফুলকি

এইজন্যে আমার রাগ ওটার উপর।” রাজহাস বললে, “ওর পা দুখান। বড়ে বিস্ত্রী, একেবারে হাসের মতো নয়। দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে ওঠে, গোড়ালির ছাপ তে। নয়, চলবার বেলায় মাটির উপরে বাবু যেন তারাফুল কেটে চলে যান। কী দেমাক।” কেউ বললে, “কুঁকড়োর চেহারাটা ভালো বলেই সে তাকে পছন্দ করে না। কেন সে নিজে কুচ্ছিত হল কুঁকড়োটা হল না।”

 আর কেউ কেউ বললে, “সব ক-টা গির্জের চুড়োতে তার সোনার মূর্তি দেখলে কার না গা জ্বালা করে। নিশ্চয়ই ও পাখিটা কিস্টান। ওকে জাতে ঠেলাই ঠিক। মোচনমানের সঙ্গে এক ঘটিতে জল খেতে আমি ওকে স্বচক্ষে দেখেছি। ওর কি বাচবিচার আছে। ওর ছায়া মাড়াতে ভয় হয়।”

 ঠিক সেই সময় ঘড়ি পড়ল আর ঘড়ির মধ্যে কলের পাখি বলে উঠল, “পি-পি-পিরা-আ-আ-লি।”

 মেঘের আড়াল থেকে চাদ অমনি উঁকি দিলেন। উঠোনের এক কোণে খানিক আলে। পড়ল। ছুঁচে আস্তে আস্তে মুখ বার করে পেঁচাকে বললে, “আমার সে পাজিটার সঙ্গে কোনোদিন চোখোচোখিই নেই।”

 ঘড়িকলের পাখিটাকে আর শুধতে হল না; সে আপনিই বললে, “একটুতে আমার দম ফুরিয়ে যায়, রোজ দম না দিলে মুশকিল, আর কুঁকড়োর দমের শেষ নেই।” ব'লেই গল। ঘড় ঘড় করে ঘড়িপাখি চুপ করলে। টং টং করে আটটা বাজল। পেচারা সব ডানা মেলে বললে, “আর আমরা কুঁকড়োকে একটুও ভালোবাসি নে, কেননা—কেননা ও কিনা— সে কিনা” বলতে বলতে অন্ধকারের মধ্যে পেচার উড়ে পড়ল নীল রাত্রির মধ্যে। একলা সোনালিয়া উঠোনে দাড়িয়ে বললে, “আর কুঁকড়োকে আমি এখন খুব ভালোবাসি, কেননা —কেননা— সবাই তার শত্রু।”