পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
আলোর ফুলকি

এইটেই পরে বেড়াচ্ছি, সে কথাটা লুকিয়ে লাভ নেই। আর আমার এই গায়ের কাপড়— এটা প’রে এখানে আসাটা বাস্তবিক অন্যায় হয়েছে; দেখো-না রঙচঙ বেশি নেই, কেবল একটু কচিপাতার সবুজ আর পাকা ধানের সোনালী। মাফ করে, আমি নেহাতই একটা সাধারণ কুঁকড়ো যাকে দেখা যায় ধানের গোলায়, চালের মটকায়, গির্জার চুড়োয়, সোনায় মোড়া ছেলেদের হাতে টিনের বাঁশির আগায় রঙ-কর, জলেস্থলে সর্বত্র। কেবল কোনো চিড়িয়াখানায় আর জাদুঘরে আমার দেখা পাওয়া যাবে না।”

 চিনি-দিদি বললেন, “তা হোক। তোমার কাজের সাজে এসেছ তাতে কী দোষ। তোমার সময় কোথা যে, সেজে বেড়াবে? কাজের পাখি তোমার সব দোষ মাপ। কিন্তু যারা বিয়েতে যায়, কেরানীর কিম্বা উকিল ব্যারিস্টার মোক্তারের সাজ পরে, কিম্বা বুট হ্যাট পরে যায় বউভাতের ভোজে, তাদের আমি কিছুতে মাপ করি নে।”

 দাঁড়কাক ফোকরাল, “জুড়ি লোটন পায়রা।” কুঁকড়ো ভাবলেন বুঝি তাঁর বন্ধু কবুদ আর কবুদনী। কিন্তু ফিরে দেখলেন সাদা দুটি গুজরাট, পায়রা কি— কী, বোঝবার জো নেই, ডিগবাজি খেতে খেতে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ল। তার পর দাড়কাক ফুকরলে, “ব্রহ্লাওভাণ্ডোদর রাজহংস স্বামিজী।” কুঁকড়ো পদ্মবনের মরাল আসছেন ভেবে আনন্দে দরজার দিকে চেয়ে রইলেন, অনেকক্ষণ পরে পাখির মতো পাখি আসছে ভেবে; কিন্তু হেলতে ফুলতে সাদা মরাল না এসে, নেংচাতে নেংচাতে এলেন এক পাখি, দেখতে মরালের মতো কতকটা, কিন্তু মোটেই সাদা নয়, সিধেও নয়, কালো ঝুল। কুঁকড়ো নিশ্বেস ছেড়ে বললেন, “মরাল না এসে এল কিনা মরালের একটা বিকট কালো ছায়া।” বলে কুঁকড়ো একটা দোলার উপরে দাড়িয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলেন, দূরে সবুজ মাঠ, তারি উপরে ধেনু চরছে, বাছুরগুলো ছুটোছুটি করছে; কোথায় আমলকী গাছের ছায়ায় বঁশি বাজছে তারি শব্দ। পৃথিবীর সবই এখনো এইসব হরেক রকম পোষা পাখিগুলোর মতো টেরে বেঁকে অদ্ভুত রকম হয়ে ওঠে নি; সাদাসিদে গোলগাল যেমন ছিল তেমনিটি আছে। ঘাসের রঙ সবুজই রয়েছে,আকাশনীল, জল পরিষ্কার, পাখিরা উড়ছে ডানা ছড়িয়ে, গোরু হঁটিছে চার পায়ে, মানুষ চলেছে ছপায়ে। কুঁকড়ো আনন্দে এই-সব দেখছেন আর সোনালি আস্তে আস্তে তাঁর কাছে এসে দাড়িয়ে বলছে, “এই-সব