পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৬৩

 কুঁকড়োর কথা শুনে একটা পোশাক মোরগ রেগে বলে উঠল, “বাড়াবাড়ি কোরে না।” কুঁকড়ো সে কথায় কান না দিয়ে বলে চললেন, সূর্যের দিকে চেয়ে, “এর কি সত্যিকার মোরগ। কখনোই নয়। কোথায় এদের মধ্যে সেই সকালের আলো, সেই রক্তের মতো রাঙা মুর। সূর্য তুমি সাক্ষী, এরা দেখতে হরেক রকমের বটে, কিন্তু মিথ্যে ছায়া-বাজি বৈ সত্যি নয় সত্যি নয়। আর ছায়াবাজিরই মতো এরা তামাশা দেখিয়ে কোথায় মেলাবে তার ঠিক নেই। এদের কেউ বেঁচে থাকবে না, হ-রে-ক-র-ক-ম-বা-জি-বা-হ-বা” বলে কুঁকড়ো একটু থামলেন। ময়ুর শোধালে, “কাকে তুমি সত্যিকার মোরগ বল শুনি।”

 “সত্যিকার মোরগ তাকেই বলি যার একমাত্র ধ্যান হল”, ব’লে কুঁকড়ো চুপ করলেন। সব পাখিই আমনি শুধোলে, “কী কী? ধ্যান হল কী?”

 কুঁকড়ো বুক-ফুলিয়ে বললেন, “আলোর ফুলকি— ই-ই—।”

 সব পোশাকী মোরগ অমনি বাজখাই গলায় বলে উঠল, “কা-লো-কু-ল-চু-র। ই, হঁ। এই তে চোখ বুজলেই আমরা সরষে-ফুলের মতো গুড়ে গুড়ো কী যেন দেখতে পাচ্ছি। বাঃ এ তো সবাই ধ্যান করে, নতুনটা কী হল?” ব’লে মোরগগুলো কুঁকড়োকে প্রশ্ন করতে লাগল, তিনি ওড়বে না খাড়বে না নাদে গলা সাধেন? তিনি দক্ষিণী চালে গান করেন না হনুমানের মতে। কোন রাগে তার দখল বেশি।

 কুঁকড়ো সংগীতশাস্ত্র, স্বরলিপি এ-সবের ধার দিয়েও যান নি; তিনি প্রশ্ন শুনে অবাক হলেন। কুঁকড়ো গাইবে কুঁকড়োর মতে, হনুমানের মতে কেন যে হনুমান ছাড়া আর কেউ গাইতে যাবে কুঁকড়ে তা বুঝে উঠতে পারলেন না। এক মোরগ বললে, “রোসে, তালটা ঠিক করে নেওয়া যাক, ‘কা-আ-আ-লো-ও-ও-ও’• • •নাঃ মিলল না তো, ফাঁকের বেলায়ও সোম পড়ছে, সোমের বেলাতেও তাই, ফাক মোটেই নেই।” ফাক আওয়াজের জন্তে কেন যে এ পাখিটা এত ব্যস্ত তা কুঁকড়ো বুঝলেন না। এক মোরগ মুখে মুখে স্বরলিপি করে যাচ্ছিল, সে বললে, “প্রথম লাগল মধ্যম আ-মা; তার পর লো, রি-র-গা-র-গ। এই হল মা-রি-গা।”

 আর-একজন বললে, “মা-রি-গ। তো নয়, ধ-পা-স।”