পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
আলোর ফুলকি

 চিনি-দিদি বললেন, “চললে নাকি। চললে নাকি।” বলে তাদের সঙ্গে ছুটলেন।

 সোনালি কুঁকড়োকে বললে, “আর কেন? চলে এইবার।” বলে কুঁকড়োকে নিয়ে বনের দিকে আস্তে আস্তে চলে গেল। জিন্ম ফ্যাল ফ্যাল করে সেইদিকে খানিক চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে গোলাবাড়িতে ফিরে গেল মাথা নাড়তে নাড়তে।

 চিনি-দিদি ফিরে দেখলেন সবাই চলে গেছে। তিনি তবু যেন সবাইকে খাতির ক’রে বেড়াতে লাগলেন আর কেবলই বলতে লাগলেন, “আসছে সোমবারে আসবে তো? নমস্কার। মনে থাকে যেন আসছে সোমবার”

 খালি উঠোনময় চিনি-দিদি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এইভাবে, এমন সময় কাক ফুকরোলে, “কাছিম মিয়া, কাছিম মিয়া”...। চিনি-দিদি তার ছেলেকে বলছিলেন, “আঃ, আজ মজলিস কেমন জমেছিল দেখিছিস্!” গুটি-গুটি কাছিম এসে কুলতলায় বসলেন।

বনে বসন্তকাল এসেছে। চমৎকার দিনগুলি— আলো-ছায়ায় নিবিড় বনের সবুজে ঢাকা পথে-পথে, আর নিস্তব্ধ রাতগুলি— রাঙা-ফুলে ঢাকা অশোক গাছের দোলনায়, কুঁকড়ো আর সোনালিয়া ফুটিতে আনন্দে কাটাচ্ছেন। এমন সবুজ, এমন ঠাণ্ডা ছায়ায় ছায়াময় সে বন, যেন মনে হয় মায়ের কোলে এসেছি। সেইখানে কুঁকড়ো আস্তে আস্তে সব কষ্ট ভুলতে লাগলেন। সকাল থেকে সন্ধে তিনি বেড়িয়ে বেড়ান, একলাটি। চারি দিকে বড়ো বড়ো দেবদারু আর ঝাউ, এত পুরোনো যে তাদের বয়স কেউ জানে না। ডালে ডালে সব সবুজ শেওলা জটার মতো বুলে পড়েছে; শিকড়গুলো তাদের পাথর আঁকড়ে কোন পাতালে যে নেমে গেছে তার ঠিক নেই। কোথাও বুর-কুর করে পাতা ঝরছে, কোথাও ঝাউ ফলগুলোয় মাটি একেবারে বিছিয়ে গেছে। একটা নালার ধারে ঝরনা ঝরছে, তারি এক পাশে ব্যাঙের ছতরি বেঁধে হাট বসিয়েছে।