পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
আলোর ফুলকি

সোনালির কালো চোখদুটি ঘুমে ঢলে পড়ে, যখন তার সোনার দেহটি আলিসে লুটিয়ে চমৎকার দেখতে হয়”, সোনালির মুখে এবার হাসি ফুটল। “...সেইসময় আমি পা-টিপে-টপে শিশিরের উপর দিয়ে দূরে গিয়ে, আলোর জন্যে যে-ক'টি গান সব ক'টি গেয়ে, যেমনি দেখি অন্ধকার ফিকে হচ্ছে, অমনি আস্তে আস্তে বাসায় ফিরি।—কী বলছ? শিশিরে পা ভিজে দেখে সে সন্দেহ করবে? তাই যদি হবে, তবে ডানার পালকগুলো আছে কী করতে। পা-ফ্লুটো মুছে নিতে কতক্ষণ। তার পর আস্তে আস্তে অশোকের ডালে বসে যে-গান সে গাইতে মানা করে নি, সেইটে গেয়ে তার ঘুম ভাঙাই।”

 সোনালি আর রাগ সামলাতে না পেরে ফোঁস করে উঠল। কুঁকড়ো ঘাড় ফিরিয়ে তাকে দেখেই চটপট ফোনে বললেন, “নাঃ কিছু না, আর-একদিন হবে এখন।”

 সোনালি বললে, “আমাকে ঠকালে কেন।”

 ফোনটা শব্দ করলে, “ফুর-র।”

 কুঁকড়ো বললেন, “আমি তোমাকে—”

 “ফুর-র”, আবার ফুলের মধ্যে মাছিটা ডাকলে। কুঁকড়ো ফুলটার উপর ডানা চাপা দিলেন, কিন্তু সেটা ক্রমাগত “ফুর-রর-র-র-র-র” ব’লেই চলল।

 সোনালি খুব রেগে বললেন, “কী নির্দয় তুমি ঠগ।... কেন শুধচ্ছ। তুমি মুরগিদের খবর নিতে এতক্ষণ ব্যস্ত ছিলেন? কে কোথায় ঘুমোয়, কে কী খায়, কার কটি ছানা হল? গোলাবাড়ির বাইরেও যে ডালকুত্তোটা তার পর্যন্ত খবর নেওয়া হচ্ছে। এও না-হয় সইলুম কিন্তু ভোরবেলায় ডানায় পা মুছে চুপি চুপি. ও বুঝেছি, তুমি একলা এই সোনার পাখিটাকেই ভালোবাস, কেমন?”

 কুঁকড়ো খানিক চুপথেকে বললেন,”সোনালি, ভেবে দেখো, এই হৃদয়ের মধ্যে আলোটি যদি না দেখতে পেতে তবে কি এখানে আসতে তোমার ইচ্ছে হত। হৃদয়ের মধ্যে কিছু না থাকার চেয়ে আলো থাকা কি ভালো নয়। রঙিন-আলো-দিয়ে-গড়া সোনালিয়া। আমি আলো-কে ভালোবাসি তাই তোমাকেও ভালোবাসতে পেরেছি, আলোর দিকে হৃদয় পেতে যদি প্রতিদিন না দাড়াতেম, তবে ভালাবাসার ফোয়ারা যে এতদিনে শুকিয়ে যেত সে কি জান না।”