পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৮১

 পঞ্চম, ষষ্ঠ, তারাও থপ থপ ছপ ছপ করে এগিয়ে এসে বললে, “সব বড়ো বড়ো গানের. সব পবিত্র গানের।”

 ব্যাঙেদের কুঁকড়োর মোটেই ভালো লাগছিল না, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে তিনি তাদের বসতে বললেন। একটা মস্ত ব্যাঙের ছাতা টেবিলের মতো পাতা রয়েছে, তারি চারি দিকে সবাই বসলেন। সদালাপ চলল। ব্যাঙ বিনয় করে বললেন, তারা কিছুই নয়, অতি হীন। কুঁকড়ে বললেন, “কিন্তু বড়ো বড়ো চোখ দেখলেই বোঝা যায় তারা খুবই বুদ্ধিজিভি।” কোলাব্যাঙ দাড়িয়ে উঠে বললেন, “আমরা বনের মধ্যে একছত্রী সবাই,মোরগদের মধ্যে একমাত্র কুঁকড়োকে একদিন ভোজ দিতে মনস্থ করেছি। আপনার গান পৃথিবীকে আলোকিত,পুলকিত, চমকিত, সচকিত করেছে।” এক ব্যাঙ বললে, “সত্য আপনার গান...।” অন্য ব্যাঙ আকাশে চোখ তুলে বললে, “স্বর্গীয়।” “অথচ এই পৃথিবীরই।”— অন্য ব্যাঙ মাটিতে চোখ নামিয়ে বলে উঠল। সোনাব্যাঙ বললে, “স্বপনপাখির গান, সে কী তুচ্ছ আপনার গানের কাছে।”

 কুঁকড়ো বলে উঠলেন,“কী বললে। স্বপনপাখির গান.. তুচ্ছ?... একি সত্যি? না,তোমরা নিশ্চয় বাড়িয়ে বলছ।” কোলাব্যাঙ গম্ভীর স্বরে বললে, “স্বপনপাখির স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে, সত্যিকার গানে বনকে মাতিয়ে তুলে দেয়, এমন একজনের বিশেষ দরকার হয়ে পড়েছে। একটু অদলবদল না হলে আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না।”

 কুঁকড়ো দাড়িয়ে উঠে বললেন, “সে কাজটা যদি আমার দ্বারা সম্ভব হয়, তবে আমি রাজি আছি।” সব ব্যাঙ ডেকে উঠল, একসঙ্গে কুঁকড়োর জয় দিয়ে, “কুক-ড়ো পাহাড়-ত-লির কুঁকড়ো-পা-হাড়—ত-লির।”

 সোনাব্যাঙ গলা ভারী করে বললে, “এইবার স্বপনের দফা রফা হল।” কুঁকড়ো শুধলেন, “দফা রফা কী রকম।” কিন্তু কে তাঁর কথা শোনে। গলা ফুলিয়ে গান ধরলে সব ব্যাঙ-কটা করতাল বাজিয়ে—

মেঘ হাকে, “গড় কর্‌, গড় কর্‌, গড় কর্‌।”
 বিষ্টি বলে, “টুপ টাপ, চুপ চাপ, ঝুপ ঝাপ।”
শিল বলে, “তড়-বড়, গড় কর, গড় কর।”