পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৮৩

ভোজের নিমন্ত্রণ করছে।” সোনালি অবাক হয়ে শুধলে, “তুমি যাবে নাকি ওদের ভোজেতে।” কুঁকড়ো বললেন, “আপত্তি কী। এরা সবাই বুদ্ধিজিভি। আমার গান এদের যদি ডান গজাবার কাজে লাগে, তবে কেন আমি এদের সে মুখ থেকে বঞ্চিত রাখি। তোমার স্বপনপাখির গান তো সে কাজটা করতে পারলে না, উলটে বরং বেচারাদের দম ফাটিয়ে দেবারই জোগাড় করেছে। শোনে-ন স্বপনপাখি ওদের কী গানই শুনিয়েছে।” কুঁকড়ো ব্যাঙেদের ইশারা করলেন, আর অমনি তারা সোনালিকে স্বপনপাখির গানের নকল দেখিয়ে দিলে, “দম ফাট, দম ফাটু, তুয়ো দুয়ো দুয়ো। দম ফাট ফাট, দম, দুয়ো দুয়ো।”

 “শুনলে তো।” কুঁকড়ো সোনালিকে বললেন। ঠিক সেই সময় বনের শিয়রে নিশুত রাতের আঁধার কাঁপিয়ে একটি স্বর এসে পৌছল, “পিয়ে।” কুঁকড়ো সেই মিষ্টি স্বর শুনে চমকে বললেন, “ও কে ডাকে?” কোলাব্যাঙ তাড়াতাড়ি ব’লে উঠল, “কেউ নয়, ওই সেই পাখিটা।”

 এবার আবার সেই স্বপনপাখির মিষ্টি সুর কুঁকড়োর কানে এল, যেন একটি-একটি আলোর ফোট— “পিয়ো, পিয়ে। পিয়ে।” কুঁকড়ো শুনতে লাগলেন। একি পাখির ডাক। না এ স্বপ্নের বীণায় ঘা পড়ছে! সোনাব্যাঙ কী বলতে আসছিল, কুঁকড়ো তাদের এক ধমক দিয়ে সরিয়ে দিলেন। এইবার স্বপনপাখি গান ধরলে,

পিয়া।
আঁধার রাতের পিয়া, একলা রাতের পিয়া।
পিয়ো, ওগো পিয়ো। দিয়ে, দেখা দিয়ে।
আমায় দেখা দিয়ে, একলা দেখা দিয়ো।
আঁধার-করা ঘরে, জাগছি তোমার তরে,
অন্ধকারে পিয়ো, দিয়ে দেখা দিয়ো।

  দেখতে দেখতে চাদের আলো জলে স্থলে এসে পড়ল। নীল আলোর সাজে সেজে অন্ধকারের পিয়া যেন বনের আঁধার-করা বাসরঘরে এসে দাড়ালেন। স্বপনপাখি আনন্দে গেয়ে উঠল, “পিয়ে, সুধা পিয়ে, সুধা পিয়ো পিয়ো পিয়ো।”