পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৮৯

আলোময়।” সোনালি অমনি শুধলে, “কবে সেটা হবে শুনি।” “কোনো এক শুভদিনে।” ব'লে কুঁকড়ো চুপ করলেন।

 সোনালি বললে, “আমাদের এই বনটিকে ভুলো না যেন সেদিন।” কুঁকড়ো বললেন, “কোনোদিন ভুলব না। এইখানেই জানলেম যে, এক স্বপন ভেঙে যায়, আর-এক স্বপন এসে দেখা দেয়, স্বপনের সঙ্গে নিজেও ভেঙে পড়া নয় কিন্তু জেগে ওঠা, নতুন আলোয় নতুন আশা নিয়ে।” সোনালি বুঝলে কুঁকড়ো আর থাকেন না, সে হতাশ হয়ে অভিমানে বলে উঠল,“যাও যাও, সেই খোপের মধ্যে রোজ সন্ধেবেলা ঘুম দিয়ে, নিজের অন্দরমহলে মই বেয়ে উঠে।”

 কুঁকড়ো উত্তর দিলেন, “ডানা খুলে উড়তে বনের পাখিরা শিখিয়েছে যে”

 “যাও, সেই ঝুড়ির মধ্যে মুরগি-গিন্নি এতক্ষণ কাঁদছে।”

 কুঁকড়ো বললেন, “মা আমায় দেখে কী খুশিই হবেন।”

 জিম্মা বললে, “আর বলবেন পুরোনো চাল ভাতে বেড়েছে রে।” ব'লে কুকুর ঠিক মুরগি-গিন্নির আওয়াজটা নকল করলে। কুঁকড়ো জিম্মাকে বললেন, “চলো যাওয়া যাক। আর কেন?”

 সোনালি যেন সে কথা শুনেও শুনলে না। সে দেখাতে চায় কুঁকড়ো গেলে তার একটুও কষ্ট হবে না। কিন্তু আপনা হতেই তার চোখদুটি জলে ভরে এল। কুঁকড়ো তা দেখলেন, তাঁরও মন একটু উদাস হল। শেষে কুঁকড়ো জিম্মাকে সোনালির কাছে দু-একদিন থাকতে বললেন। জিম্মা অনেক দুঃখু সয়েছে, সে সোনালিকে বোঝাবার জন্যে কিছুদিন বনে থাকাই স্থির করলে। কুঁকড়ো বিদায় নিয়ে এবার সত্যিই চললেন, সোনালি আর থাকতে পারলে না, ছুটে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাকে বললে, “আমাকেও সঙ্গে নাও।” কুঁকড়ো তার মুখে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন, “আলোর ছোটো বোন হয়ে থাকতে পারবে কি” “কখনো না।” ব’লে সোনালি সরে দাঁড়াল। “তবে আসি।” ব’লে কুঁকড়ো এগোলেন। সোনালি রেগে বললে, “আমি তোমায় একটুও ভালোবাসিনে।” কুঁকড়ো তখন মাঝ-পথে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন,“কিন্তু আমি তোমায় সত্যিই ভালোবাসি, কেবল ভাবছি আমার দিনগুলির সঙ্গে যদি তুমি মিলতে পারতে।” বলতে-বলতে কুঁকড়ো বনের আড়ালে বেরিয়ে গেলেন। সোনালি রাগ-ভরে ব’লে