পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

δ. Σ 8 ኔ আশুতোষ-স্মৃতিকথা উগ্র সমাজ-সংস্কারকদের মত কোন কাজ করেন নাই, বরং তিনি প্রাচীনপন্থীদের মতই কাজ করিতেন। জাতি-ভেদ উঠাইয়া দিবার চেষ্টা তো দূরের কথা, তিনি স্বীয় ব্রাহ্মণত্বের গৌরব করিতেন। স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায় লিখিয়াছেন,-“তিনি ব্রাহ্মণের বেশে আপনাকে পরিচয় দেওয়া শ্লাঘার কথা মনে করিতেন।”—(বঙ্গবাণী) স্বীয় গৃহে বিধবা-বিবাহ-উপলক্ষে তিনি গোড়া ব্রাহ্মণদের সকলকেই নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। তিনি নিজ বাড়ীতে বার মাসে তের পার্বণ সুসম্পন্ন করিতেন এবং পূজার মন্দিরে বসিয়া পট্টবস্ত্র-পরিধানপূর্বক চণ্ডীপাঠ করিতেন। বাড়ীতে নগ্ন-গায়ে ও চটি-পায়ে থাকিতেন। একদিন একজন হ্যাট-কোট-পরা উচ্চপদস্থ ব্যক্তি দস্তুরমত সাহেবী কায়দায় তাহার সহিত দেখা করিয়াছিলেন । নিতান্ত অনাড়ম্বর-বেশী আশুতোষকে নগ্ন-গায়ে দ্বিতলের বারান্দাটায় ঘুরিতে দেখিয়৷ তিনি তঁাহাকে বাড়ীর কোন নগণ্য লোক মনে করিয়া তাহার হাতে কার্ডখানি দিয়া বলিলেন-“জজ সাহেবকে কার্ডখানি পাঠাইয়া দিন।” আশুবাবু কার্ডে জজ সাহেবের নাম দেখিয়া প্রথম সাক্ষাতের পরিচয়োচিত সৌজন্যের সহিত কর-মার্দানের জন্য দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করিয়া দিলেন । সাল পায় তিনি যতই হাত বাড়াইতে লাগিলেন, ততই সেই গর্বিত ব্যক্তি তাহার সংস্পর্শের হাত হইতে রক্ষা পাইবার জন্য পশ্চাৎ হটিয়া যাইতে লাগিলেন। আশুবাবু বলিলেন—“ভয় পাইতেছেন কেন ? আমিই আশু মুখার্জি।” তখন সেই ব্যক্তি কোন গ্রীকদেবতার ( জোভ ) নাম উচ্চারণ করিয়া ইংরাজীতে বলিলেন- “এ কি সম্ভব যে, আপনার মত লোক ধুতি পরিয়া এরূপ বেশে থাকেন ?” আশুবাবু বলিলেন- “সে কৈফিয়ৎ আপনাকেই দিতে হইবে, আমাকে নহে। আমার চৌদ্দপুরুষ যে ভাবে থাকিতেন, আমি তাহাঁই করিতেছি। আপনার পূর্বপুরুষদের কেহ কি গলায় নেকটাই র্বাধিয়াছেন, মাথায় হাটু পরিয়াছেন এবং এরূপ প্যান্ট-কোট শরীরে ধারণ করিয়াছেন ?” সেই সাহেববেশী, পদস্থ ব্যক্তি ইহার উত্তর দিতে পারিলেন না । এই ঘটনার কথা আমি আশুবাবুর নিজের মুখ হইতে শুনিয়াছি। বস্তুতঃ দেশীয় পোষাকের গৌরব তিনি শিক্ষিত-সমাজে বাড়াইয়াছিলেন। সিনেটের সদস্তগণের