পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট RoS করিতে বাধ্য হইলেন। সে সময়ের ব্রাহ্মণ-সমাজ আর এখনকার ব্রাহ্মণ-সমাজের তারতম্য করিলে আকাশ-পাতালের প্রভেদ দাড়াইয়াছে বলিতে হইবে। যখন এইভাবের ব্রাহ্মণ্যতেজ নির্বাণোন্মুখ হইল, তখন মানুষোচিত বীর্য্য ও স্বাধীন মনোবৃত্তির কোন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে দেখিতে পাইলেই আমাদের মনে এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উদিত হইত,-এদেশের মাটিতে তো ইহা নাই, এ গুণ এই ব্যক্তি পাইলেন কোথা হইতে ? সুতরাং যে দেশে এই সকল মানুষোচিত বীর্য্যবিত্তা ও সদগুণাবলীর দৃষ্টান্ত সুলভ, এবং বহুল পরিমাণে দৃষ্ট হয়, সেই দেশের প্রতিই আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইত এবং পাশ্চাত্ত্য প্রভাবকে গোমুখী কল্পনা করিয়া আমাদের গুণগরিমার গঙ্গার উৎপত্তিস্থল তাহাই বলিয়া নির্ণয় করিতাম। বস্তুতঃ ব্রাহ্মণের এই তেজ সুচিরাগত, আমরা চন্দ্রগুপ্তের সময়ে চাণক্যের এবং দেবপালের সময়ে দর্ভপাণি ও কেদার মিশ্রের এই ব্রাহ্মণ্য নিষ্ঠা ও তেজের পরিচয় পাইয়াছি। এই তেজ ও নিষ্ঠাকে আদর্শ-স্বরূপ। স্বীকার করিয়াই সেনরাজার ব্রাহ্মণদিগের কৌলিন্য প্রদান করিয়াছিলেন এবং তৎপূর্বে পালবংশাবতংস গোপালও এইসকল গুণের পূজা করিয়া বাঙ্গলা দেশের সমাজ সংস্কার করিয়াছিলেন । বিদ্যাসাগরের চরিত্রে এই তেজ, এই ত্যাগই অতি স্পষ্টরূপে দৃষ্ট হয় ; ইহা বিদেশী প্রভাব জাত নহে। টুলো ব্রাহ্মণের পদে এই উপানহ বহু যুগ হইতে বিরাজ করিতেছে, উঠা বিদ্যাসাগরের উদ্ভাবনা নহে ; তিনি তাহার পূর্বপুরুষের ধুতি ও চাদর ছাড়েন নাই, ३शउ७ ऊँाश्ाल 6शोलिक जू नाशे । বিদ্যাসাগর প্রাচীন-পন্থী হইয়াও এই হিসাবে নবীন-পন্থী। জগতে মহাপুরুষ ও বীরগণ সচরাচর কোন নূতন সত্য আবিষ্কার করেন না ; সত্য জটায়ুর মতই বৃদ্ধ ও বহু প্রাচীন। যখন এই সত্য কালে স্নান হইয়া পড়ে, তখনও তাহা লুপ্ত হয় না,- ভস্মের নীচে খোচা দিলে যেরূপ স্ফলিঙ্গ দেখা যায়, সেইরূপ বীরপুরুষগণ যুগ-যুগ-সঞ্চিত সংস্কারের আবর্জন উস্কাইয়া এই নিজীব ও মৃতপ্রায় সত্যকে পুনরায় সজীব ও উজ্জল করিয়া প্রদৰ্শন করেন। বিদ্যাসাগর বিধবা-বিবাহ-প্রচলনের যে চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহা একেবারেই বিদেশী প্রভাবের ফলে নহে,-উহা নব্য সংস্কারকের সমাজ ভাঙ্গিয়া-চুরিয়া বিদেশী আদর্শে । গড়িবার চেষ্টা-প্রসুত নহে। তিনি নিজেই বহু শাস্ত্র ঘাটিয়া প্রাচীন সত্যকে উদ্ধার করিয়া দেখাইয়াছেন যে, পূর্বে এ সমাজে অভাগিনী রমণীদের জন্য মনুষ্য-মনে সহানুভূতি ও করুণা ছিল এবং পূর্বসূরিগণ এজন্য সামাজিক ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। বিষ্ঠাসাগর ছিলেন-প্রাচীন যুগের সত্যের নূতন প্রতিষ্ঠাতা, তাহার উদ্যমে বাৰ্দ্ধক্যের মধে যৌবনের তরুণ প্রভা ক্ষরিত হইতেছে।