পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RV)3 আশুতোষ-স্মৃতিকথা দিয়াছেন, সেই হিসাবে দেখিয়া বিচার করিতে হইবে না। তিনি যাহা দিয়াছিলেন, এক কথায় বলিতে হইলে-তােহা তাহার সর্বস্ব। এই পুরুষের সঙ্গে বাঙ্গলার ব্যান্ত্রি আশুতোষের চরিত্রগত অনেক সাদৃশ্য আছে। বিদ্যাসাগর ছিলেন খাটি ব্রাহ্মণ পণ্ডিত,-তিনি পরিণত বয়সে ইংরাজের সংস্পর্শে আসিয়া ইংরাজী শিখিয়াছিলেন । আশুতোষের শিক্ষা-দীক্ষা সমস্তই নব্য তন্ত্রের, তিনি পাশ্চাত্ত প্রভাবের একেবারে তোপের মুখে ছিলেন। তিনি যখন জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তখন র্তাহার সহাধ্যায়ীরা ইংরাজের অনুকরণের কৃতিত্ব দেখাইতে যাইয়া পরস্পরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতেন। তঁহাদের অনেকেই বাঙ্গলা-ভাষাকে ঘূণা করিতেন। তঁহার এক সহযোগী বাঙ্গালী বিচারপতি আয় রাখিয়া তাহার সন্তানদিগকে হিন্দী শিখাইতেন ; পূরে সাহেব হইতে হইলে ইংরাজী তো শিক্ষার মুখ্য বিষয় হইবেই,-চাকরদিগের সঙ্গে কথা বলার জন্য হিন্দীও জানা চাই। বাঙ্গলায় কথা বলা সে সময়ের উচ্চশিক্ষিত সমাজে হেয় ব্যাপার বলিয়া বিবেচিত হইত। এই সকল উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি বাধ্য হইয়া বাঙ্গলা বলিতে যাইয়া মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাকৃত ইংরাজী টান দিতেন। আমাদের শৈশবে দেখিয়াছি, বাঙ্গলা ভাষায় ‘ফেল’ হইলে পরীক্ষার্থী তাহ বরঞ্চ গৌরবের বিষয় বলিয়াই মনে করিত । বিদ্যাসাগর র্যাহাদের মধ্যে লালিত-পালিত তাহারা সকলেই খাটি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোক । তিনি শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবনে যে আবেষ্টনীর মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষা পাইয়াছিলেন, তাহাতে উপানহ, ধুতি-চাদর এবং টিকির সংস্কার সহজ ও স্বাভাবিক ছিল , পরিণত বয়সে তিনি ইংরাজী শিখিয়া উচ্চ পদ লাভ করিয়া ইংরাজ রাজপুরুষদের সংস্পর্শে আসিবার পরেও তিনি তঁহার জীবনের অভ্যন্ত রীতি ছাড়েন নাই, ইহাই আমাদের চক্ষে তঁাহাকে গৌরব দিতেছে। এ কথাটাও খুব সহজ নহে। এইরূপ শিক্ষা ও পদ পাওয়া মাত্র তখনই বাঙ্গালী উন্নত সম্প্রদায়ের লোকের মাথা বিগড়াইয়া যাওয়া স্বাভাবিক ছিল। বাহে পাশ্চাত্ত্য রীতির পক্ষপাতী হইয়াও সে আমলে এই শিক্ষিত সম্প্রদায় ইংরাজ-চরিত্রের দাঢ্য, আত্মসম্মান-জ্ঞান, স্বদেশের প্রতি অনুরাগ এ সকল কিছুই দেখাইতে পারিতেন না । বিদেশীয়দের সমাজের অতিউপেক্ষিত এক কোণে একটু স্থান করিয়া লইবার জন্য র্তাহারা ব্যবহারে ও চরিত্রে অতিশয় মানসিক দৈন্য ও হীনতা প্রদৰ্শন করিতেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর শুধু দেশীয় রীতি রক্ষা করেন নাই, তাহার চরিত্রে ব্রাহ্মণ্য তেজও বর্ত্তমান যুগের পাশ্চাত্ত জাতি-সুলভ প্রখর ব্যক্তিত্ব অভাবনীয়-রূপে বিকাশ পাইয়াছিল। তথাপি বলিতে হয়, টুলো ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত-সমাজে তখনও এই বিষয়ের উপাদান বিদ্যমান ছিল এবং বিদ্যাসাগর চরিত্র তঁাহার আবেষ্টনীর প্রতিকুল বা স্বীয় সামাজিক সংস্কারের বিরোধী छिन्न न ।