পাতা:আশুতোষ স্মৃতিকথা -দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লক্ষ্যের পথে 盤や আনন্দিত হয়, বাল্যকাল হইতে অশুপাবুব তাহাতে সম্পূহ ছিল না। গঙ্গাপ্রসাদ পুত্রটিকে জনসমুদ্রের বাহিরে, কুসঙ্গের সংক্রামক সংস্পর্শ হইতে দূরে রাখিয়া গম্ভীর প্রকৃতি ও শিক্ষা সাধনায় নিরত করিয়া তুলিয়াছিলেন। বালকবয়সে আশুতোষ সাতার কাটিতে ভালবাসিতেন, এবং প্রতি দিবসই নিয়মিত রূপে ভ্রমণ করিয়া শরীর সক্রিয় এবং কর্ম্মশীল রাখিতেন। তাহার গ্রন্থাগারে সর্ববিষয়ে এত অধিক পুস্তক সংগৃহীত হইয়াছিল যে, অধ্যয়নের তপস্যাসিদ্ধির সমস্ত উপকরণই তাহাতে সঞ্চিত ছিল। বাস্তবিকপক্ষে আশুতোষের গৃহের বিরাটু গ্রন্থাগার তঁহার জ্ঞানের বিশালতা ও ঐকান্তিক পাঠানুরক্তিরই প্রতীক-স্বরূপ। এই পাশ্চাত্য উচ্চশিক্ষার অগ্রদূত ভোজনে, শয়নে, ব্যবহারে এবং আচার-বিচারে ঠিক “টুলো” ভট্টাচার্য ছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য বিদ্যাকে অগ্রসর হইয়া বরণ করিয়া আনিয়াছিলেন, কিন্তু প্রাচ্য-রীতিতে। মোট কথা র্তাহার মধ্যে গিল্টিকর কিছু ছিল না । তাহার সমস্তই ছিল খাটি । আমাদের দেশের পণ্ডিতদের কেহ কেহ এক কালে শ্রুতিধর ছিলেন ; কোন গি৯ি নং দীর্ঘ কবিতা বা গান তাহারা একবার মাত্র শুনিয়া মনে রাখিতে বঁটি সোনা পারিতেন। প্রাচ্য পণ্ডিতেরা এক কালে সমস্ত বেদ কণ্ঠস্থ করিতেন, এই জন্য বৈদিক সাহিতাকে শ্রুতি বলে। সে দিনও বাঙ্গলার রঘুনাথ শিরোমণি সমগ্র চিন্তামণি গ্রন্থখানি কণ্ঠস্থ করিয়া মিথিলা হইতে নবদ্বীপে আসিয়া নব্য ন্যায়ের ভিত্তি স্থাপন করিয়াছিলেন,-উক্ত সুবৃহৎ গ্রন্থ নকল করিয়া আনা নিষিদ্ধ ছিল। সেদিনও শ্রীমান সোমেশচন্দ্র বসু বহুসংখ্যক অঙ্কের হরণপূরণ অতি অল্প সময়ের মধ্যে মনে মনে সাধন করিয়া ইয়োরোপ ও আমেরিকার পণ্ডিতবর্গকে আশ্চর্য্যান্বিত করিয়া আসিয়াছেন । আমরা বিলাতে য়ে সকল গুণের অভাব দেখি, অথচ এক সময় সে সকল গুণের দৃষ্টান্ত এদেশে প্রচুর পরিমাণে ছিল, সেই সকল গুণের কোন একটির দৃষ্টান্ত নিজেদের মধ্যে দেখিলে বিস্ময় প্রকাশ করিয়া থাকি । আমরা নিজের জাতির গুণাগুণ একেবারে ভুলিয়া গিয়াছি। ভারতবর্ষের এখন সর্বপ্রথম কর্ত্তব্য, জাতীয় চরিত্র কি গুণে “এক সময়ে পুষ্ট হইয়াছিল, তাহা আবিষ্কার করা, তাহা হইলেই হারাণে জিনিষ । খুজিয়া পাইবার সম্ভাবনা হইবে। আশুতোষের স্মৃতি-শক্তি আতি অসাধারণ ছিল, তৎসম্বন্ধে অনেকেই উদাহরণ দিতে পারিবেন।