পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

খাই না। যাও—বুঝলে!

 —আজ্ঞে—

 সাহেবের টমটম চলে গেল। নালু পালের বুক তখনো ঢিপ্‌ঢিপ্‌ করছে। বাবাঃ, এক ধাক্কা সামলানো গেল বটে আজ। সে শিস দিতে দিতে ডাকলে—ও সতীশ খুড়ো!

 সতীশ কলু ধানগাছের আড়ালে আড়ালে রাস্তা থেকে আরও দূরে চলে গিয়েছিল। ফিরে কাছে আসতে আসতে বললে—যাই।

 —বাবাঃ, কতদূর পালিয়েছিলে? আমায় ডাকতে দেখে বুঝি দৌড় দিলে ধানবন ভেঙে?

 —কি করি বলো। আমরা হলাম গরীব-গুরবো নোক। শ্যামাচাঁদ পিঠে বসিয়ে দিলে করচি কি তাই বলে দিনি। কি বললে সায়েব তোমারে?

 —বললে ভালোই।

 —তোমারে রায় মশাই কি বলছিল?

 —বলছিল, সায়েব আসছে। সোজা হয়ে বসো।

 —তা বলবে না? ওরাই তো সায়েবের দালাল। কুটি-র দেওয়ানি করে সোজা রোজগারটা করেচে রায় মশাই! অতবড় দোমহলা বাড়িটা তৈরী করলে সে বছর।


 রায় মশায়ের পুরো নাম রাজারাম রায়। মোল্লাহাটি নীলকুঠির দেওয়ান। সাহেবের খয়েরখাঁই ও প্রজাপীড়নের জন্যে এদেশের লোকে যেমন ভয় করে, তেমনি ঘৃণা করে। কিন্তু মুখে কারো কিছু বলবার সাহস নেই। নিকটবর্তী পাঁচপোতা গ্রামে বাড়ি।

 বিকেলের সূর্য বাগানের নিবিড় সবুজের আড়ালে ঢলে পড়েচে, এমন সময় রাজারাম রায় নিজের বাড়িতে ঢুকে ঘোড়া থেকে নামলেন। নফর মুচির এক খুড়তুতো ভাই ভজা মুচি এসে ঘোড়া ধরলে। চণ্ডীমণ্ডপের দিকে চেয়ে দেখলেন অনেকগুলো লোক সেখানে জড়ো হয়েচে। নীলকুঠির দেওয়ানের