পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 দেওয়ান রাজারাম রেগে উত্তর দিলেন—এডা বড্ড ধড়িবাজ। এডারে চুনের গুদামে পুরে রেখো আজ রাত্তিরি। চাপুনির জল খাওয়ালি যদি জ্ঞান হয়। তাতেও যদি না সারে, তবে শ্যামচাঁদ আছে জানো তো?

 পাইক নফর মুচি কাছে দাঁড়িয়ে, বললে—চলুন ঠাকুরমশায়।

 —কোথায় নিয়ে যাবা?

 —চুনের গুদোমে নিয়ে যাতি বলচেন দাওয়ানজি, শোনলেন না? আপনি ব্রাহ্মণ দেবতা, গায়ে হাত দেবো না, দিলি আমার মহাপাপ হবে। আপনি চলুন এগিয়ে।

 —কোন দিকি?

 —আমার পেছনে পেছনে আসুন।

 কিছুদুর যেতেই রাজারাম পুনরায় রামকানাইকে ডেকে বললেন—তাহলি চুনের গুদামেই চললেন? সে জায়গাটাতে কিন্তু নাকে কাঁদতি হবে গেলে। আপনি ভদ্রলোকের ছেলে তাই বললাম।

 —তবে আমারে কেন সেখানে পাঠাচ্চেন দেওয়ান মশাই, পাঠাবেন না।

 —আমার তো পাঠানোর ইচ্ছে নয়। আপনি যে এত ভলোক হয়ে, কুঠির মাইনে বাঁধা কবিরাজ হয়ে, আমাদের একটা উপ্‌গার করবেন না—

 —তা না, হলপ ক’রে মিথ্যে বলতি পারবো না। ওতে পতিত হতে হয়।

 —তবে চুলের গুদামে ওঠো গিয়ে ঠেলে। যাও নফর—চাবি বন্ধ ক’রে এসো।


 রাত প্রায় দশটা। দেওয়ান বাজারাম একা গিয়ে চুনের গুদামের দরজা খুললেন। রামকানাই কবিরাজ ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়েচেন। নীলকুঠির চুনের গুদাম শয়নঘর হিসেবে খুব আরামদায়ক স্থান নয়। ‘চুনের গুদাম’-এর সঙ্গে চুনের সম্পর্ক তত থাকে না, যত থাকে বিদ্রোহী প্রজা ও কৃষকের। বড়সাহেবের ও নীলকুঠির স্বার্থ নিয়ে যার সঙ্গে বিবোধ বা মতভেদ, সে চুনের গুদামের যাত্রী। এই আলো-বাতাসহীন দুটো মাত্র ঘুলঘুলিওয়ালা ঘরে

১০৪