পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করেছে, ব্যবসাতে উন্নতি করেছে, বিয়ে-ধাওয়া করেছে সম্প্রতি। তার দোকান থেকে ধারে তেলনুন এঁদের মধ্যে অনেককেই আনতে হয়। তাকে খাতির না করে উপায় নেই।

 দীনু বললেন-এসো নালু, বোসো, কি মনে করে?

 নালু গড় হয়ে সবাইকে একসঙ্গে প্রণাম করে জোড়হাতে বললে—আমার একটা আবদার আছে, আপানাদের প্রাথতি হবে। আপনারা নাকি তীথি যাচ্ছেন শোনলাম। একদিন আমি ব্রাহ্মণ-তীথিযাত্রী ভোজন করাবো। আমার বড় সাধ। এখন আপনারা অনুমতি দিন, আমি জিনিস পাঠিয়ে দেবো চক্কত্তি মহাশয়ের বাড়ি। কি কি পাঠাবো হুকুম করেন।

 চন্দ্র চাটুয্যে আর ফণি চক্কত্তি গাঁয়ের মাতব্বর। তাঁদের নির্দেশের ওপর আর কারো কথা বলার জো নেই এই গ্রামে—এক অবিশ্যি বাজারাম রায় ছাড়া। তাঁকে নীলকুঠির দেওয়ান বলে সবাই ভয় করলেও সামাজিক ব্যাপারে কর্তৃত্ব নেই। তিনিও কাউকে বড় একটা মেনে চলেন না, অনেক সময় যা খুশি করেন। সমাজপতিরা ভয়ে চুপ করে থাকেন।

 চন্দ্র চাটুয্যে বললেন-কি ফলার করাবে?

 নালু হাতজোড় করে বললে,— আজ্ঞে, যা হুকুম। -আধ মণ সরু চিঁড়ে, দই, খাড়গুড়, ফেনি, বাতাসা, কলা, আখ, মঠ আর-

 ফণি চক্কত্তি বললেন—মুড়কি।

 —মুড়কি কত?

 —দশ সের।

 —মঠ কত?

 —আড়াই সের দিও। কেষ্ট ময়রা ভালো মঠ তৈরী করে, ওকে আমাদের নাম করে বোলো। শক্ত দেখে কড়াপাকের মঠ করে দিলে ফলারের সঙ্গে ভালো লাগবে।

 চন্দ্র চাটুয্যে বললেন-দক্ষিণে কত দেবে ঠিক কর।

 —আপনারা কি বলেন?

১২০