পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গাঁ জানিনে, আমরা সব একেন্তার হই ফি কার্তিক মাসে বর্ধমান শহরে কেবল চক্কত্তির সরাইয়ে। আপনারা যদি তীখি যান, তবে তো তেনার সঙ্গে দেখা বেই। চললাম এখন তাহ’লি।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন—এখানে জঙ্গলের মধ্যে এক যে সেই সন্ন্যাসিনী আছে, খেপী বলে ডাকে, আপনারা কেউ গিয়েচেন? গিয়ে দেখবেন, ভালো লাগবে আপনাদের।

 ফণি চক্কত্তি বললেন—ও সব জায়গায় ব্রাহ্মণের গেলে মান থাকে না। শুনিচি সে মাগী নাকি জাতে বুনো। তুমিও বাবাজি সেখানে আর যেও না।

 —মাপ করবেন মামা। ওখানে আপনাদের মান আমি রাখতে পারবে না। ভগবানের নাম করলে সব সমান, বুনো আর ব্রাহ্মণ কি মামা?

 ফণি চক্কত্তি আশ্চর্য হয়ে বললেন—বুনো আর ব্রাহ্মণ সমান!

 সবাই অবাক চোখে ভবানীর দিকে চেয়ে রইল।

 দীর্ঘশ্বাস ফেলে চন্দ্র চাটুয্যে বললেন-ওই দুঃখেই তো রাজা না হয়ে ফকির হয়ে রইলাম বাবা।

 সবাই হো হো করে হেসে উঠলো তার কথায়।

 ফণি চক্কত্তি বললেন-দাদার আমার কেবল রগড় আর রগড়। তারপর আসল কথার ঠিকঠিক হোক। কে কে যাচ্ছ, কবে যাচ্চ। নালু পাল কবে খাওয়াবে ঠিক কর।

 রূপচাঁদ মুখুয্যে বললেন—তুমি আর চন্দ্র ভায়া তো নিশ্চয় যাচ্ছ?

 —একেবারে নিশ্চয়।

 —আর কে যাবে ঈশ্বর?

 ঈশ্বর বোষ্টম বলে—জেলে পাড়ার মধ্যি যাবে ভগীরথ জেলের বড়বৌ, পাগলী জেলের মা, আমাদের পাড়ার নরহরির বৌ, ব্রাহ্মণপাড়ায় আপনারা দুজন—হামিদপুর থেকে সাতজন—সব আমাদের খদ্দের। পুমিমের.পরের দিন রওনা হওয়া যাবে। আমাকে আবার বর্ধমানে বীরচাঁদ বৈরিগী আর কুমুদিনী জেলের দলের সঙ্গে মিশতে হবে কার্তিক পূজোর দিন। রাণীগঞ্জে এক সরাই

১২৫