পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আছে, সেখানে দু’দিন থেকে জিরিয়ে নিয়ে তবে আবার রওনা। রাণীগঞ্জের সরাইতে দু’তিন দল আমাদের সঙ্গে মিলবে। সব বলা-কওয়া থাকে।

 রূপচাঁদ মুখুয্যে বললেন—আমি বড় ছেলেডারে বলে দেখি, সে আবার কি বলে। আমার আর সে যুৎ নেই ভায়া। ভবানীর মুখে শুনে বড় ইচ্ছে করে ছুটে চলে যাই সেই সন্ন্যিসি ঠাকুরের আশ্রমে। অই সব ফুল ফোটা, আমলকী গাছে আমলকী ফল, ময়ুর চরচে—বড় দেখতে ইচ্ছে করে। কখনো কিছু দ্যাখলাম না বাবাজি জীবনে।

 ঈশ্বর বোষ্টম বললে-যাবেন মুখুয্যে মশায়। আমার জানাশুনা আছে সব জায়গায়, কিছু কম করে নেবে পাণ্ডারা।

 চন্দ্র চাটুয্যে বললেন-তাই চলো ভায়া। আমরা পাঁচজন আছি, এক রকম করে হয়ে যাবে, আটকাবে না।


 ধার্মিক নাল পালের তীর্থযাত্রীসেবার দিন চন্দ্র চাটুযোর বাড়িতে খাঁটি তীর্থযাত্রী ছাড়া আরও লোক দেখা গেল যারা তীর্থযাত্রী নয়—যেমন ভবানী বাঁড়ুয্যে, দেওয়ান রাজারাম ও নীলমণি সমাদ্দার। শেষের লোকটি ব্রাহ্মণও নয়। থোকাকে নিয়ে তিলু এসেছিল ভোজে সাহায্য করতে। ভবানী নিজের হাতে পাতা কেটে এনে ধুয়ে ভেতরের বাড়ির রোয়াকে পাতা পেতে দিলেন, তিলু সাত-আট কাঠা সরু বেনামুড়ি ধানের চিড়ে ধুয়ে একটা বড় গামলায় রেখে দিয়ে মুড়কি বাছতে বসলো। পৃথক একটা বারকোশে মঠ ও ফেনিবাতাসা স্তূপাকার করা রয়েচে, পাঁচ-ছ পাতলে হাঁড়িতে দুই বারকোশের পাশে বসানো। রূপচাঁদ মুখুয্যে একগাল হেসে বললেন-“না, নালু পাল যোগাড় করেছে ভালো-মনটা ভালো ছোকরার

 তিলু এ গ্রামের মেয়ে। ব্রাহ্মণেরা খেতে বসলে সে চিড়ে মুড়কি মঠ যার যা লাগে পরিবেশন করতে লাগলো।

 চন্দ্র চাটুয্যে নিজে খেতে বসেন নি, কারণ তাঁর বাড়িতে খাওয়াদাওয়া হচ্চে, তিনি গৃহস্বামী, সবার পরে খাবেন। আর খান নি ভবানী বাঁড়ুয্যে। স্বামী-

১২৬