পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়াবো কি, তুমি পড়তে বসবার মেয়ে বটে। জানো, আজকাল কলকাতায় মেয়েদের পড়বার জন্যে বেথুন বলে এক সাহেব ইস্কুল করে দিয়েছে। কত মেয়ে সেখানে পড়ছে।

 —সত্যি?

 —সত্যি না তো মিথ্যে? আমার কাছে একখানা কাগজ আছে-সর্ব শুভকরী বলে। তাতে একজন বড় মণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার এই সব লিখেছেন। মেয়েদের লেখাপড়া শেখার দরকার। শুধু কাঁটাল খেলে মানবজীবন বৃথায় চলে যাবে। না দেখলে কিছু না বুঝলে কিছু।

 বিলু বললে কাঁটাল খাওয়া খুঁড়বেন না বলে দিচ্চি। কাটাল খাওয়া কি খারাপ জিনিস?

 নিলু বললে—খেতেই হবে আপনাকে দশটা কোষ। কদমার কাঁটাল কখনো খান নি, খেয়েই দেখুন না কি বলছি।

 —আমি যদি খাই তোমরা লেখাপড়া শিখবে? তোমার দিদি কেমন সংস্কৃত শিখেচে, কেমন বাংলা পড়তে পারে। ভারতচন্দ্র রায়ের কবিতা মুখস্থ করেচে। তোমরা কেবল~~

 নিলু কৃত্রিম রাগের সুরে হাত তুলে বললে—চুপ! কাঁটাল খাওয়ার টো খবরদার আর দেবেন না কিন্তু

 —স্বাধ্যায় কাকে বলে জানে? রোজ কিছু কিছু শাস্ত্র পড়া। ভগবানের কথা জানবার ইচ্ছে হয় না? বৃথা জীবনটা কাটিয়ে দিয়ে লাভ কি? কাঁ-

 —আবার!

 —আচ্ছা যাক। ভগবানের কথা জানবার ইচ্ছে হয় না?

 —আমরা জানি।

 —কি জানো? ছাই জাননা। —দিদি বুঝি বেশি জানে আমাদের চেয়ে

 —সে উপনিষদ পড়ে আমার কাছে। উপনিষদ কি তা বুঝতে পারবে না এখন। ক্রমে বুঝবে যদি লেখাপড়া শেখো।

১৩৫