পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একা বাঁশের মাচাতে পড়ে থাকেন, কেউ দেখবার নেই, নীলকুঠির ভয়ে কেউ তাঁর কাছেও ঘেঁষে না।

 একদিন ফর্সা শাড়ি-পড়া মেমেদের মত হাতকাটা জামা গায়ে দেওয়া এক স্ত্রীলোককে তার দীন কুটিরে ঢুকতে দেখে রামকানাই রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

 —এসো মা বোসো। তুমি ক’নে থেকে আসছো? চিনতি পারলাম না যে।

 স্ত্রীলোকটি এসে তাঁকে দূর থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলে। বললে-আমারে চিনতে পারবেন না, আমার নাম গয়া।

 রামকানাই এ নাম শুনেছিলেন, চমকে উঠে বললেন—গয়া মেম?

 —হা বাবাঠাকুর, ঐ নাম সবাই বলে বটে।

 —কি জন্যি এসেচো মা? আমার কত ভাগ্যি।

 —আপনার ওপর সায়েবদের মধ্যি ছোটসায়েব খুব রাগ করেছে। আর করেচে দেওয়ানজি। কিন্তু বড়সায়েব আপনার ওপর এ-সব অত্যাচারের কথা অনাচারের কথা কিছুই জানে না। আপনি আছেন কেমন?

 —জর। বুকে ব্যথা! বড় দুর্বল।

 —আপনার জন্যি একটু দুধ এনেছিলাম।

 —আমি তো জ্বাল দিয়ে খেতি পারবো না। উঠতি পিরচি নে। দুধ তুমি ফিরিয়ে নিয়ে যাও মা।

 —না বাবাঠাকুর, আপনার নাম করে এনেলাম—ফিরিয়ে নিয়ে যাবো না। আপনি না খান, বেলগাছের তলায় ঢেলি রেখে দিয়ে যাবো। আমার কি সেই ভাগ্যি, আপনার মত ব্রাহ্মণ মোর হাতের দুধ সেবা করবেন।

 রামকানাই শঠ নন, বলেই ফেললেন—আমি যা শূদ্রের দান নিই না।

 গয়া চতুর মেয়ে, হেসে বললে-কিন্তু মেয়ের দান কেন নেবেন না বাবাঠাকুর? আর যদি আপনার মনে হচাং-প্যাচাং থাকে, মেয়ের দুধির দাম আপনি সেরে উঠে দেবেন এর পরে। তাতে তো আর দোষ নেই?

 —হ্যাঁ, তা হতি পারে না।

১৩৮