জগদম্বা বললেন—বেলের শরবত খাবা?
—আঃ, আগে শোনো কি বলচি। বেলের শরবত এখন রাখো।
—কি গা? কি হয়েচে?
—বড়সায়েব ছোটসায়েবকে খুব বকেচে।
—কেন?
—রামকানাই কবিরাজকে আমরা একটু কচা-পড়া পড়িয়েছিলাম। ওর দুষ্টুমি ভাঙতি আর আমারে শেখাতি হবে না। নীলকুঠির মুখ ছোট করে দিয়েচে এই ব্যাটা সেই রামুসর্দারের খুনের মামলায়। জেলার ম্যাজিস্টার ডঙ্কিন্সন্ সাহেব যাই বড়সায়েবকে খুব মানে, তাই এযাত্রা আমার রক্ষে। নইলে আমার জেল হয়ে যেতো। ও বাঞ্চৎকে এমন কচা-পড়া দিইছিলাম যে আর ওঁকে এ দেশে অন্ন করি খেতি হেতো না। তা নাকি বড়সায়েব বলেচে, অমন কোরো না। নীলকুঠির জোরজুলুমের কথা সরকার বাহাদুরের কানে উঠেচে। কলকাতায় কে আছে হরিশ মুখুয্যে, ওরা বড্ড লেখালেখি করচে খবরের কাগজে। খুব গোলমালের সৃষ্টি হয়েচে। এখন অমন করলি নীলকর সাহেবদের ক্ষেতি হবে। আমারে ডেকি ছোটসায়েব বললে—গয়া মেম এই সব কানে তুলেচে বড়সায়েবের। বিটি আসল শয়তান।
—কেন, গয়া মেম তোমাকে তো খুব মানে?
—বাদ দ্যাও। যার চরিত্তির নেই,তার কিছুই নেই। ওর আবার মানামানি। কিছু যে বলবার যে নেই, নইলে রাজারাম রায়কে আর শেখাতি হবে না কাকে কি করে জব্দ করতি হয়।
—তোমাকে কি ছোটসায়েব বকেচে নাকি?
—আমারে কি বকবে? আমি না হলি নীলির চাষ বন্ধ! কুঠিতি হওয়া খেলবে—ভোঁ ভোঁ। আমি আর প্রসন্ন চক্কত্তি আমীন না থাকলি এক কাঠা জমিতেও নীলির দাগ মারতি হবে না কারো! নবু গাজিকে কে সোজা করেছিল? রাহাতুনপুরির প্রজাদের কে জব্দ করেছিল? ছোটসায়েব বড়সায়েব কোনো সায়েবেরই কর্ম নয় তা বলে দেলাম তোমারে। আজ যদি এই রাজারাম রায়