পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রাজারাম খুব আশ্চর্য হয়ে গেলেন বাইরে যে এসেছিল তাকে দেখে। সে হোল বড়সায়েবের আবদালি শ্রীরাম মুচি। এমন কি গুরুতর দরকার পড়েছে যে এত রাত্রে সায়েব আবদালি পাঠিয়েচে!

  —কি রে রেমো?

 —কর্তামশায়, দু’সায়েব এক জায়গায় বসে আছে বড় বাংলায়। মদ খাচ্চে। কি একটা জরুরী খবর আছে। আমারে বললে-ঘোড়ায় চড়ে আসতি বলি। এখুনি যেন আসে।

 —কেন জানিস?

 —তা মুই বলতি পারবো না কর্তামশায়। কোনো গোলমেলে ব্যাপার। হবে। নইলি এত রাত্তিরি ডাকবে কেন? মোর সঙ্গে চলুন। মুই সড়কি এনিচি সঙ্গে করে। মোদের শত্তুর চারিদিকি। রাতবেরাত একা আঁধারে বেরোবেন না।

 রাজারাম হাসলেন। শ্রীরাম মুচি তাকে আজ কর্তব্য শেখাচ্চে। ঘোড়ায় চড়ে তিনি একটা হাঁক মারলে দু’খানা গাঁয়ের লোক থরহরি কঁপে। তাঁকে কে না জানে এই দশ-বিশখানা মৌজার মধ্যে। আধঘণ্টার মধ্যে রাজারাম এসে সেলাম ঠুকে সাহেবদের সামনে দাড়ালেন। সাহেবদের সামনে ছোট টেবিলে মদের বোতল ও গ্লাস। বড়সায়েব রূপোর আলবোলাতে তামাক টানচে তামাকের মিঠেকড়া মৃদু সুবাস ঘরময়। ছোটসাহেব তামাক খায় না, তবে পান দোক্তা খায় মাঝে মাঝে, তাও বড়সাহেব বা তার মেমকে লুকিয়ে। বড়সাহেব ছোটসাহেবের দিকে তাকিয়ে কি বললে ইংরেজিতে। ছোটসাহেব রাজারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললে—দেওয়ান ভারি বিপদের মধ্যি পড়ে গেলাম যে!। (সেটা রাজারাম অনেক পূর্বেই অনুমান করেছেন)।

 —কি সায়েব?

 —কলকাতা থেকে এখন খবর এল, নীল চাষের জন্যি লোক নারাজ হচ্চে। গবর্ণমেণ্ট তাকে সাহায্য করচে। কলকাতায় বড় বড় লোকে খবরের কাগজে হৈ-চৈ বাধিয়েছে। এখন কি করা যায় বলো! শুলকো, শুভরত্নপুর, উলুসি,

১৪৪