পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সাতবেড়ে, ন'হাটা এই গাঁয়ে কত জমি নীলির দাগ মারা বলতি পারবা?

 রাজারাম মনে মনে হিসাব করে বললেন—আন্দাজ সাতশো সাড়ে সাতশো বিধে।

 এই সময় বড়সাহেব বললে—কট জমিটে ভাগ আছে?

 রাজারাম সসম্ভ্রমে বললেন-ওই যে বললাম সায়েব (হুজুর বলার প্রথা আদৌ প্রচলিত ছিল না)—সাতশো বিঘে হবে।

 এই সময় বিবি শিপটন বড় বাংলার সামনে এসে নামলেন টমটম্ থেকে। ভজা মুচি সহিস পেছন থেকে এসে মেমসাহেবের হাত থেকে লাগাম নিলে এবং তাকে টমটম থেকে নামতে সাহায্য করলে। ঘোর অন্ধকার রাত-মেমসাহেব এত রাতে কোথায় গিয়েছিল? রাজারাম ভাবলেন কিন্তু জিজ্ঞেস করবার সাহস পেলেন না।

 মেমসাহেব ওদের দিকে চেয়ে হেসে কি ইংরেজিতে বললে। ও হরি! ওটা কি? ভজা মুচি একটা মরা খরগোশ নামাচ্চে টমটমের পাদানি থেকে। মেমসাহেবের হাতের ভঙ্গিতে সেটা ভজা সসম্ভ্রমে এনে সাহেবদের সামনে নামালে। মেমসাহেবের হাতে বন্দুক। অন্ধকার মাঠে নদীর ধারে খরগোশ শিকার করতে গিয়েছিল মেমসাহেব তাহোলে।

 মেমসাহেব ওপরে উঠতেই এই দুই সাহেব উঠে দাড়ালো। (যত্তো সব!) ওদের মধ্যে খানিকক্ষণ কি বলাবলি ও হাসাহাসি হোলে। মেমসাহেব রাজারামের দিকে তাকিয়ে বললে-কেমন হল শিকার?

 বিনয়ে বিগলিত বাজাৱাম বললেম-আজ্ঞে, চমৎকার।

 —ভালো হইয়াছে?

 —খুব ভালো। কোথায় মারলেন মেমসায়েব?

 ~-বাঁওড়ের ধারে-এই ডিকে-খড় আছে।

 —খড়?

 ভজা মুচি মেমসাহেবের কথার টীকা রচনা করে বলে-সরাইপুরির বিশ্বেসদের খড়ের মাঠে।

১৪৫

ইছামতী-১০