পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সে কথাটা আমার বলা দরকার।

 বাড়ি গিয়ে আপনার বৌমাদের কাছে বলি। তিলুকে জানাতে হবে। ওরাই জানাবে—

 পরে সুর নিচু করে বললেন—একটা কথা বলি। ভবানীকে এখানে বাস করাবো এই আমার ইচ্ছে। তুমি গিয়ে তোমার তিনটি বোনর বিয়েই ওর সঙ্গে দ্যাও গিয়ে—বালাই চুকে যাক। পাঁচবিঘে ব্রহ্মোত্তর জমি যতুক দেবে। এখুনি সব ঠিক করে দিচ্চি—

 রাজারাম চিন্তিত মুখে বললেন—বাড়ি থেকে না জিগ্যেস করে কোনো কিছুই বলতে পারবো না কাকা। কাল আপনাকে জানাবো।

 —তুমি নির্ভয়ে বিয়ে দাও গিয়ে। আমার ভাগ্নে বলে বলচিনে। কাটাদ’ বন্দিঘাটির বাঁরুরি, এক পুরুষে ভঙ্গ, ঘটকের কাছে কুলুজি শুনিয়ে দেবো এখন। জ্বলজ্বলে কুলীন, একডাকে সকলে চেনে।

 —বয়েস কতো হবে পাত্তরের?

 —তা পঞ্চাশের কাছাকাছি। তোমার বোনদেরও তো বয়েস কম নয়। ভবানী সম্নিসি না হয়ে গেলি এতদিনে সাতছেলের বাপ। দ্যাখো আগে তাকে —নদীর ধারে রোজ এক ঘণ্টা সন্দে-আহ্নিক করে, তারপর আপন মনে বেড়ায়, এই চেহারা! এই হাতের গুল্‌!

 —ভবানী রাজী হবেন তিনটি বোনকে এক সঙ্গে বিয়ে করতে?

 —সে ব্যবস্থা বাবাজি, আমার হাতে। তুমি নিশ্চিন্দি থাকো।

 একটু অন্ধকার হয়েছিল বাঁশবনের পথে। জোনাকি জ্বলছে কুঁচ আর বাবলা গাছের নিবিড়তার মধ্যে। ছাতিম ফুলের গন্ধ ভেসে আসচে বনের দিক থেকে।

 অনেক রাত্রে তিলোত্তমা কথাটা শুনলে। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ উঠেছে নদীর দিকের বাঁশঝাড়ের পেছন দিয়ে। ছোট বোন বিলুকে ডেকে বললে—ও বিলু, বৌদিদি তোকে কিছু বলেছে?

১১