পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সবের সুবিধে নেই তত।

 নরহরি পেশকায় ভালো ব্রাহ্মণ, সে-ই প্রশ্ন করেছে, যোগাড় দিয়েছে গোলাপ পাঁড়ে। তা ভালোই রেঁধেচে। না, সাহেবদের নজর উঁচু, খাটিয়ে নিয়ে খাওয়াতে জানে। মস্ত বড় রুই মাছের ঝোল, পাঁচ-ছখানা করে দাগার মাছ ভাজা, আমের অম্বল, মুড়িঘণ্ট ও দই।

 গদাধর মূহুরী পেটুক ব্যক্তি, শেষকালে বলে ফেললেও পেশকাবশায়, বলি সব করলেন, একটু মিষ্টির ব্যবস্থা করলেন না?

 সে সময় রসগোল্লার রেওয়াজ ছিল না। এ সমস, মিষ্টি বলতে বুঝতে চিনির মঠ, বাতাসা বা মণ্ড। নরহরি পেশকার বললে-~-কথাটা মনে ছিল না। নইলি ছোসায়েব দিতি নারাজ ছিল না।

 গদাধর মহুরী ভাতের দলা কেঁৎ করে গিলে বললে না, সায়েবরা খাওয়াতে জানে, কি বলে প্রসন্নাদা?

 প্রসন্ন চক্রবর্তী আমীন ক’দিন থেকে আজ অন্যমনস্ক। তার মন কোনো সময়েই ভালো থাকে না। কি একটা কথা সে সব সময়েই ভাবচে...ভাবচে। গদাধরের কথার উত্তর দেবার মত মনের সুখ নেই। এই যে কাজের চাপ, এই যে বড় মাছ দিয়ে ভাতের ভোজ—অন্য সময় হলে, অন্য দিন হোলে তার খুব ভালো লাগতো—কিন্তু আজ আর সে মন নেই। কিছুই ভালো লাগে না, খেতে হয় তাই খেয়ে যাচ্ছে, কাজ করতে হয় তাই কাজ করে যাচ্চে, কলের পুতুলের মত। আর সব সময়ে সেই এক চিন্তা, এক ধ্যান, এক জ্ঞান।

 সে কি ব্যাপার? কি ধ্যান, কি জ্ঞান?

 প্রসন্ন আমীন গয়া মেমের প্রেমে পড়ে। সে যে কি টান, তা বলার কথা নয়। কাকে কি বলবে? গয়া যে বড্ড উচু ডালের পাখি। হাত বাড়ার সাধ্য কি প্রসন্ন চক্কত্তির মত সামান্য লোকের? গয়া মেম সুদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়েচে এই একটা মস্ত সান্ত্বনা। সুদৃষ্টিতে চাওয়া মনে গয়া মেম জানতে পেরেচে প্রসন্ন আমীন তাকে ভালোবাসে আব এই ভালোবাসার ব্যাপারে গয়া অসন্তুষ্ট নয় বরং প্রশ্রয় দিচ্ছে মাঝে মাঝে।

১৪৯