পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —কেঁদো না। আমি তোমায় বকিনি। আমি বকলি বাবা আমার আর সহ্যি করতি পারেন না। আমি বকিনি! কি দিই হাতে? ওমা ওটা কি রে? পাখী?•••

 এমন সময় তিলু দ্রুতপদে ঘরের মধ্যে ঢুকে বললে—এই যে সোনামণি কাঁঁদচে কেন রে?

 —তোমার আদুরে গোপাল একটা উঁচু সুর শুনলি অমনি ঠোট ওল্টান। চড়া কথা বলবার জো নেই।

 নিলু বললে—দাদা কোথায় গিয়েচেন দেখে এলে?

 —দাদা গিয়েচেন সায়েবদের কাজে। কোথায় তিতুমীর বলে একটা লোক, মহারাণীর সঙ্গে যুদ্ধ করচে সেই লড়াইতে নীলকুঠির সায়েবের লোকজন নিয়ে গিয়েছে, দাদাকেও নিয়ে গিয়েচে।

 তিতু মীর?

 —তাই তো শুনে এলাম। বৌদিদি কেঁদে-কেটে অনত্থ করচে। লড়াই হে ব্যাপার, কে বাঁচে কে মরে তার ঠিকানা কি আছে?

 নিলু হঠাৎ চীৎকার করে কাঁদতে লাগলো পা ছড়িয়ে। তিলু যত বলে, যত সান্ত্বনা দেয়-নিলু ততই বাড়ায়—খোকা অবাক হয়ে ক্রন্দনরতা ছোট মা’র মুখের দিকে খানিকটা চেয়ে থেকে নিজেও চীৎকার করে কেঁদে উঠলো। এমন সময় হস্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে এসে হাজির হোলো বিলু। সে নিলুর ও খোকার কান্নার রব শুনে ভাবলে বাড়িতে নিশ্চয় একটা কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললে—কি হোলো দিদি? নিলুর কি হোলো?....

 তিলু বললে—দাদা তিতুমীরের লড়াইয়ে গিয়েচে শুনে কাঁদচে। তুই একটু বোঝা। ছেলেমানুষের মতো এখনো। দাদা * ভালোবাসে বড়, এখন ছেলেমানুষের মতো আবদার করে দাদার কাছে।

 বিলু নিলুর পাশে বসে ওকে বোঝাতে লাগলো, ও কি? চুপ কর। ওতে অমঙ্গল হয়। কুঠিসুদ্ধ কত লোক গিয়েছে, ভয় কি সেখানে? ছিঁ, কাঁদে

১৬১

ইছামতী-১১