পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

খয়রামাছ একপোয়া। আধসের মাছই নেবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু অত মাছ ভাজবার তেল নেই। সর্ষের তেল ইদানীং আকা হয়ে পড়েছে বাজারে, নি আনা সে ছিল, হয়ে দাঁড়িয়েচে চোদ্দ পয়সা; কি করে বেশি তেল খরচ করে সে?

 হাতের পুজি বাড়াতে হবে। পান-সুপুরি বিক্রি করে উন্নতি হবে না। উন্নতি আছে কাটা কাপড়ের কাজে। মুকুন্দ দে তার বন্ধু, মুকুন্দ তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। ত্রিশটা টাকা হাতে জমলে সে কাপড়ের ব্যবসা আরম্ভ করে দেবে।

 নালু পালের ঘুম চলে গেল। মামার বাড়িতে গলগ্রহ হয়ে থাকার দায় থেকে সে বেঁচেছে! এখন সে আর ছেলেমানুষ নয়, মামীমার মুখনাড়ার সঙ্গে ভাত হজম করবার বয়েস তার নেই। নিজের মধ্যে সে অদম্য উৎসাহ অনুভব করে। এই ঝি ঝি পোকার-ডাকে-মুখর জ্যোৎস্নালোকিত ঘুমন্ত রাত্রে অনেক দূর পর্যন্ত যেন সে দেখতে পাচ্ছে। জীবনের কত দূরের পথ।

 রাজারাম সকালে উঠেই ঘোড়া করে নীলকুঠিতে চলে গেলেন। নীলকুঠি যাবার পথটি ছায়াপ্তি, বনের লতাপাতায় শ্যামল। যজ্ঞিডুমুর গাছের ডালে পাখীর দল ডাকচে কিচ কিচ, করে, জ্যৈষ্ঠের শেষে এখনো ঝড়-ঝাড় সোদালি ফুল মাঠের ধারে

 নীলকুঠির ঘরগুলি ইছামতী নদীর ধারেই। বড় থামওয়ালা সাদা কুঠিঠা বড়সাহেব শিপটনের। রাজারাম শিপটনের কুঠির অনেক দূরে ঘোড়া থেকে নেমে ঝাউগাছে ঘোড় বেঁধে কুঠির মনে গেলেন, এবং উঁকিঝুঁকি মেরে দেখে পায়ের জুতো জোড়া খুলে রেখে ঘরের মধ্যে বড় হলে প্রবেশ করলেন।

 শিপটন্ ও তার মেম বাদে আর একজন কে সাহেব হলে বসে আছে। শিপটন্ বললেন—দেওয়ান এডিকে এসো—Look here, Grant, this is our Dewan Roy-

 অন্য সাহেবটি আহেলা বিলিতি। নতুন এসেছেন দেশ থেকে। বয়েস ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে, পাদ্রিদের মত উচু কলার পর, বেশ লম্বা দোহারা গড়ন। এঁর নাম কোলসওয়ার্দি গ্র্যাণ্ট, দেশভ্রমণ করতে ভারতবর্ষে এসেছেন। খুব ভালো

১৩