—উনি অন্যরকম লোক, সেদিনও ঐ কথা জিগ্যেস করেছিলেন মনে আছে? আপনি সেদিন পড়িয়েছিলেন—পুরুষান্ন পরং কিঞ্চিৎ-তাঁর চেয়ে বড় আর কিছু নেই, এই তো মানে?
—ঠিক।
—আমিও ভাবি—ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকি, সব সময় পেরে উঠিনে। আপনি আমাকে আরও পড়াবেন। ভালো কথা, আমাদের দু'আনা করে পয়সা দেবেন।
—কেন?
—কাল তেরের পালুনি। বনভোজনে যেতি হবে।
—আমিও যাবো।
—তা কি যায়? কত বৌ-ঝি থাকবে। আচ্ছা, তেরের পালুনির দিন বিষ্টি হবেই, আপনি জানেন?
—বাজে কথা।
—বাজে কথা নয় গো। আমি বলচি ঠিক হবে।
–তোমারও ঐ সব কুসংস্কার কেন? বৃষ্টির সঙ্গে কি কার্য-কারণ সম্পর্ক থাকতে পারে বনে বসে খাওয়ার?
—আচ্ছা, দেখা যাক। আপনার পণ্ডিতি কতদূৰ টেঁকে!
ভাদ্র মাসের তেরোই আজ। ইছামতীর ধারে ‘তেরের পালুনি' করবার জন্যে পাঁচপোতা গ্রামের বৌ-ঝিরা সব জড়ো হয়েছে। নালু পালের স্ত্রী তুলসীকে সবাই খুব খাতির করচে, কারণ তার স্বামী অবস্থাপন্ন। তেরের পালুনি হয় নদীর ধারের এক বহু পুরনো জিউলি গাছের আর কদম গাছের তলায়। এই জিউলি আর কদম গাছ দুটো একসঙ্গে এখানে দাঁড়িয়ে আছে যে কতদিন ধরে, তা গ্রামের বর্তমান অধিবাসীদের মধ্যে কেউ বলতে পারে না। অতি প্রাচীন লোকদের মধ্যে নীলমণি সমাদ্দারের মা বলতেন, তিনি যখন নববধূরূপে এ গ্রামে প্রবেশ করেছিলেন আজ থেকে ছিয়াত্তর বছর আগে, তখনও তিনি তাঁর শাশুড়ী ও দিদিশাশুড়ীর সঙ্গে এই গাছতলায় তেরের
১৭২