পালুনির বনভোজন করেছিলেন। গত বৎসর পঁচাশি বছর বয়সে নীলমণির মা দেহত্যাগ করেছেন।
মেয়েরা পাড়া হিসেবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বনভোজনের আয়োজন করচে। এখানে আর রান্না হয় না, বাড়ি থেকে যার যার যেমন সঙ্গতি- খাবার জিনিস নিয়ে এসে কলার পাতা পেতে খেতে বসে, মেয়েরা ছড়া কাটে, গান গায়, উলু দেয়, শাঁখ বাজায়। এই বনভোজনের একটি চিরাচরিত প্রথা এই, তুমি সম্পন্ন গৃহস্থঘরের বৌ, তুমি ভালো ভালো জিনিস এনেচ খাবার জন্যে—যার দারিদ্র্যের জন্যে তেমন কিছু আনতে পারেনি, তাদের তুমি ভাগ করে দেবে নিজের আনা ভালো খাবার। এ কেউ বলে দেয় না, কেউ বাধ্যও করে না-এ একটি অলিথিত গ্রাম্য-প্রথা বরাবর চলে আসছে এবং সবাই মেনেও এসেছে।
যেমন আজ হোলো-তুলসী লাল কস্তাপেড়ে শাড়ী পরে যতীনের বৌ আর বোন নন্দরাণীর কাছে এসে দাঁড়ালো। আজ মেলামেশা ও ছোয়ছুঁয়ির খুব কড়াকড়ি না থাকলেও বামুনবাড়ির ঝি-বৌরা নদীর ধার ঘেঁষে খাওয়ার পাত পাতে, অন্যান্য বাড়ির মেয়েরা মাঠের দিকে ঘেঁষে খেতে বসে। যতীনের বৌ এনেচে চালভাজা, দুটি মাত্র পাকা কলা ও একঘটি ঘোল। তাই খাবে ওর ননদ নন্দরাণী আর ও নিজে। তুলসী এসে বললে-ও স্বর্ণ, কেমন আছ ভাই?
—ভালো দিদি। খোকা আসেনি?
—না, তাকে রেখে এ্যালাম বাড়িতি। বড্ড দুষ্টুমি করবে এখানে আনলি। কি খাবা ও স্বর্ণ?
—এই যে। ঘোলটুকু আমার বাড়ির। আজ তৈরী করিচি সকালে। তিন দিনের পাতা সর। একটু খাস তো নিয়ে যা দিদি।
তুলসী ঘোল নেওয়ার জন্যে একটা পাথরের খোরা নিয়ে এল, ওর হাতে দু’খানা বড় ফেনি বাতাসা আর চারটি মর্তমান কলা।
—ও আবার কি দিদি?
১৭৩