পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 পরদিন সকালে এক অভিনব দৃশ্য দেখা গেল।

 দুই মোড়ায় দুই সাহেব, পিছনে আর এক সাদা বড় ঘোড়ায় দেওয়ান রাজারাম রায়, আর একটা বাদামী রংয়ের ঘোড়ায় প্রসন্ন চক্কত্তি আমীন এক লম্বা সারিতে চলেচে—ওদের পিছনে কুঠির লাঠিয়ালদের সর্দার রসিক মল্লিক। লোকে বুঝলে আজ একটা ভয়ঙ্কর দাঙ্গা-হাঙ্গামার ব্যাপার না হয়ে আর যায় না। হঠাৎ একস্থানে প্রসন্ন আমীন টুক করে নেমে পড়লো। হেঁকে রাজারামকে বললে—দেওয়ানজি, একটু এগিয়ে যান, ঘোড়ার জিন্‌টা ঢল হয়ে গেল, কষে নি-

 তারপর মুখ উচু করে দেখলে, ওরা বেশ দু'কদম দূরে চলে গিয়েছে। প্রসন্ন চক্কত্তি ঘোড়াটা কাদের একটা সোদালি গাছে বেঁধে রাস্তা থেকে সামান্য কিছু দূরে অবস্থিত একখানা চালাঘরের বাইরে গিয়ে ডাকলে—গয়া, ও গয়া—

 ভিতর থেকে গয়ার মা বরদা বাগদিনীর গলা শোনা গেল—কেডা গাবাইরে?

 প্রসন্ন চক্কত্তি প্রমাদ গনলো। এ সময়ে বুড়ী থাকে না বাড়িতে, কুঠিতে মেমসাহেবদের কাজ করতে যায়-ছেলে ধরা, ছেলেদের স্নান করানো এই সব। ও আপদ আজ এখন আবার- আঃ, যত হাঙ্গাম কি—প্রসন্ন চক্কত্তি গলা ছেড়ে বললে—এই যে আমি, ও দিদি —

 —কেডা গা? আমীনবাবু? কি—এমন অসময়ে?

 বলতে বলতে বরদা বাগদিনী এসে বাইরে উঁড়ালো, বোধ হয় ধানসেদ্ধ করছিল—ধানের হাঁড়ির কালি হাতে মাখানো মাথায় ঝাঁটার মত চুলগুলো চুড়োর আকারে বাঁধা। মুখ অপ্রসন্ন।

 প্রসন্ন চক্কত্তি বললে-কে? দিদি? আঃ, ভালোই হলো। খোটার পায়ে কি হয়েছে, হাঁটতে পারছে না। একটু নারকেল তেল আছে?

 —না, নেই। নারকেল তেল বাড়ন্ত-

 —ও! তবে যাই।

 বরদা বাগদিনী সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে প্রসন্ন আমীনের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখলে। প্রসন্ন চক্কত্তির কৈফিয়ৎ সে বিশ্বাস করেছে কিনা কে জানে। মেয়ের পেছনে

১৭৯