পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দৌড়চ্চে। সত্তর বৎসরের বৃদ্ধ রামধন বাগ্‌দি রাস্তার ধারের একটা কাঠের গুঁড়ির ওপর বসে তামাক খাচ্ছিল, তার মাথায় লাঠির বাড়ি পড়তেই চীৎকার করে মাটিতে পড়ে গেল, তার স্ত্রী চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো, লোকজন ছুটে এল, হৈ-চৈ আরম্ভ হোলো।

 কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল বাগ্‌দিপাড়ায় আগুন লেগেছে। লোকজন ছুটোছুটি করতে লাগলো। লাঠি হাতে জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড় দিল নিজের নিজের বাড়ি অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে সামলাতে। এটা হোলো দেওয়ান রাজারামের পরামর্শ। বড়সাহেবকে ঘোড়ায় চড়ে আসতে দেখে জনতা আগেই পলায়নপর হয়েছিল, কারণ বড়সাহেবকে সবাই যমের মত ভয় করে। ছোটসাহেব যতই বদমাইশ হোক, অত্যাচারী হোক, বড়সাহেব শিপ্‌টন্‌ হোলো আসল কূটবুদ্ধি শয়তান। কাজ উদ্ধারের জন্য সে সব করতে পারে। জমি বেদখল, জাল, ঘরজালানি, মানুষ খুন কিছুই তার আটকায় না। তবে বড়সাহেবের মাথা হঠাৎ গরম হয় না। ছোটসাহেবের মত সে কাণ্ডজ্ঞানহীন নয়, হঠাৎ যা-তা করে না। কিন্তু একবার যদি সে বুঝতে পারে যে এই পথে না গেলে কাজ উদ্ধার হবে না, সে পথ সে ধরবেই। কোনো হীন কাজই তখন তার আটকাবে না।

 আগুন তখুনি লোকজন এসে নিভিয়ে ফেলে। আগুন দেওয়ার আসল উদ্দেশ্য ছিল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা, সে উদ্দেশ্য সফল হোলো। রসিক মল্লিককে সকলে বড় ভয় করে, সে জাতিতে নমঃশূদ্র, দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল ও সড়কি-চালিয়ে। আজ বছর আট-দশ আগে ও নিজের এক ছেলেকে শিয়াল ভেবে মেরে ফেলেছিল সডকির খোঁচায়। সেটা ছিল পাকা কাঁটালের সময়। ওদের গ্রামের নাম নূবপুর, মহম্মদপুর পরগণার অধীনে। ঘরের মধ্যে পাকা কাঁটাল ছিল দরমার বেড়ার গায়ে ঠেস দেওয়ানো। ন' বছরের ছোট ছেলে সন্দেবেলা ঘরের বেড়ার বাইরে বসে বেড়া ফুটো করে হাত চালিয়ে কাঁটাল চুরি করে খাচ্ছিল। বশিক খস্‌খস্‌ শব্দ শুনে ভাবলে শিয়ালে কাঁটাল চুরি করে খাচ্ছে। সেই ছিদ্রপথে ধারালো সড়কির কঁটাওয়ালা ফলার নিপুণ

১৮১