পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এর কিছু না হয়—

 দেওয়ান সাহেবদের বলে লোকজন তৈরি করে রাখলেন। দুই পাহেব বন্দুক নিয়ে এগিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। থানায় কোনো সংবাদ দিতে বড়সাহেবের হুকুম ছিল না। সুতরাং পুলিস আসে নি।

 রাত দশটার পরে ইছামতীর ধারের পথে একটা হল্লা উঠলো। সাহেবরা বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করলো। দেওয়ান রাজারাম দাড়িয়েছিলেন বালা খানা ও সমাধিস্থানের মাঝখানের ঝাউগাছের শ্রেণীর অন্ধকারে, সঙ্গে ছিল, সড়কি-হাতে রসিক মল্লিক ও তার দলবল।

 রসিক মল্লিক বললে-দোহাই দেওয়ান মশাই, এবার আমারে একটু দেখতি দ্যান। ওদের একটু সাম্বপানা করি। ওদের চুলুকুনি মাঠো যদি না করি এবার, তবে মোর বাবার নাম তিরভঙ্গ মল্লিক নয়-

 —দুর ব্যাটা, থাম। কতকগুলো মানুষ খুন হোলেই কি হয়? অন্য জায়গায় হলি চলতো, এ যে কুঠির বুকির ওপরে। পুলিশ এসে তদন্ত করলি তখন মুশকিল।

 —লাস রাতারাতি গুম করে ফেলে দেবানি। সে ভাবটা মোর ওপঃ দেবেন দেওয়ানমশাই—

 —আচ্ছা, থাম এখন—যখন হুকুম দেবো, তার আগে সড়কি চালাবি নে—

 দিব্যি জ্যোৎস্নারাত। জারামের মনে কেমন একটা অদ্ভুত ভাব। কখনো তাঁর হয় না। ঝাউগাছের ডালের ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না এসে পড়েচে মাটির রাস্তার বুকে। তিলু বিলু নিলুর বিয়ে দিয়েছেন, ভাগ্নের মুখ দেখেচেন। জীবনের সব দায়িত্ব শেষ করেচেন। আজ যদি এই দাঙ্গায় এ পথের ওপর তাঁর দেহ সড়কি-বিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে, কোনো অপূর্ণ সাধ থাকবে তাঁর মনে? কিছু না। জগদম্বার ব্যবস্থা তিনি যথেষ্ট করেছেন। তালুক, বিষয়, ধানীজমি যা আছে, একটা বড় সংসার চলে। জমিদারি আয় বছরে-তা তিনশো-চারশো টাকা। রাজার হাল। নির্ভাবনায় মরতে পারবেন তিনি। সাহেবদের এতটুকু বিপদ আসতে দেবেন না। অনেক দিনের নুন খেয়েচেন।

১৮৯