পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মেরেল লেঠেল পেটিয়ে—

 একজন বললে—তোর সেই রসিকবাবা কোথায়? তাকে ডাক—সে এসে তাকে বাঁচাক—যমালয়ে যে এখুনি যেতে হবে বাছাধন।

 সাঁই করে একটা হাত-সড়কি রাজারামের বাঁ দিকের পাঁজরা ঘেঁষে চলে গেল। রাজারামের ঘোড়া ভয় পেয়ে ঘুরে না দাঁড়ালে সেই ধাক্কাতেই রাজারাম কাবার হয়েছিলেন। তাঁর মাথা তখন ঘুরছে, চিন্তার অবকাশ পাচ্চেন না, চোখে সর্ষের ফুল দেখচেন, নারকোল গাছে যেন ঝড় বাধচে, কি যেন সব হচ্চে তাঁর চারদিকে। রামকানাই কবিরাজ গেল কোথায়? রামকানাই?

 তাঁর মাথায় একটা লাঠির ঘা লাগলো। মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠলো।

 আবার তাঁর বাঁ দিকের পাঁজরে খুব ঠাণ্ডা তীক্ষ্ণ স্পর্শ অনুভূত হোলো। কি হচ্চে তাঁর? এত জল কোথা থেকে আসচে? কে একজন যেন বললে—শালা, রামুর কথা মনে পড়ে?

 রাজারাম হাত উঠিয়েচেন সামনের একজন লোকের লাঠি আটকাবার জন্যে। এত লোকের লাঠি তিনি ঠেকাবেন কি করে? এত জল এলো কোথা থেকে? অতি অল্পক্ষণের জন্যে একবার চেয়ে দেখলেন নিজের কাপড়ের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে রাজারামের যেন বমির ভাব হোলো। খুব জ্বর হোলে যেমন মাথা ঘোরে, দেহ দুর্বল হয়ে বমির ভাব হয়, তেমনি। পৃথিবীটা যেন বন্‌ বন্‌ করে ঘুরছে।…

 তিলুর সুন্দর খোকাটা দূর মাঠের ওপ্রান্তে বসে যেন আনমনে হাসচে। কেমন হাসে! রাজারাম আর কিছু জানেন না। চোখ বুজে এল।

 অমাবস্যার অন্ধকার নেমে এসেছে গোটা দুনিয়াটায়।…

 রামকানাই কবিরাজের ভীত ও আকুল আবেদনে সন্ত্রস্ত গ্রামবাসীরা যখন লাঠিসোঁটা নিয়ে দৌড়ে গেল ষষ্ঠীতলার মাঠে, তখন রাজারামের রক্তাল্পুত দেহ ধুলোতে লুটিয়ে পড়ে আছে। দেহে প্রাণ নেই।


বছর খানেক পরে।

 রাজারামের খুন হওয়ার পর এ অঞ্চলে যে হৈ-চৈ হয়েছিল, দিনকতক তা

২০৩