পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ঠিক এই সময় ভবানী বাঁডুয্যে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে হলা পেকেকে দেখে বলে উঠলেন—আরে তুমি কোথা থেকে?

 হলা পেকে উঠে ভবানীকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলে। ভবানী হেসে বললেন—খুব ভক্তি দেখচি যে! এবার কি রকম আদায় উশুল হোলো? ও কি, ওর হাতে ও বালা কিসের?

 তিলু বললে—হলা দাদা খোকনের জন্যে এনেচে—

 হলা পেকের মুখ শুকিয়ে গেল। তিলু হেসে বললে—শোনো তোমার খোকার কথা। হ্যাঁরে, তোর মামাকে কতখানি ভালোবাসিস্‌ রে?

 খোকা বললে—আক্‌খানা।

 —তুই বুঝি বালা নিবি?

 —হ্যাঁ।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন—না না, বালা তুমি ফেরত নিয়ে যাও। ও আমরা নেবো কেন?

 হলা পেকে ভবানীর সামনে কথা বলতে সাহস পেলে না, কিন্তু তার মুখ ম্লান হয়ে গেল। তিলু বললে—আহা, দাদার বড় ইচ্ছে। সেবারও এনেছিল, আপনি নেন নি। ওর অন্নপ্রাশনের দিন।

 ভবানী বললেন—আচ্ছা, তুমি এসব কেন নিয়ে এসে বিপদে ফেল বল তো?

 হলা পেকে নিরুত্তর। বোবার শক্ত নেই।

 —যাও, রেখে দাও এ যাত্রা। কিন্তু আর কক্ষনো কিছু—

 হলা পেকের মুখ আনন্দে উজ্জ্বল দেখালো। সে ভবানীর পায়ের ধুলো নিয়ে বললে আচ্ছা, আর মুই আনচি নে কিছু। মোর আক্কেল হয়ে গিয়েচে। তবে এ সে জিনিস নয়। এ আমার নিজের জিনিস।

 ভবানী বললেন আক্কেল তোমাদের হবে না—আক্কেল হবে মলে। বয়েস হয়েচে, এখনো কুকাজ কেন? পরকালের ভয় নই?

 তিলু বললে—এখন ওকে বকাঝকা করবেন না। ওর মুখ খিদেতে শুকিয়ে গিয়েচে। এসো তুমি দাদা রান্নাঘরে দিকি।

২০৭