পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছেলেবেলায়—ভারি মিষ্টি—

 খোকা বললে—মিটি। আমি খাই—

 —যেও বাবা খোকা—এনে দেবানি—আম পাকলে দেবানি—

 —আম খাই—

 —খেও। কেন খাবা না?

 ভবানী বাঁড়ুয্যে স্নান ক’রে আহ্নিক করতে বসলেন। তিলু দু’চারখানা শসাকাটা, আধমালা নারকোলকোরা ও খানিকটা খেজুরের গুড় তাঁর জন্যে ওঘরে রেখে এল। হলা পেকে এক কাঠা চালের ভাত খেলে ভবানীর খাওয়ার পরে। খেতেও পারে। ডাল খেলে একটি গামলা। খেয়েদেয়ে সে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে লাগলো।

 কিছুক্ষণ পরে একটা কান্নাকাটির শব্দ পাওয়া গেল মুখুয্যেপাড়ার দিকে। তিলু হলা পেকের দিকে তাকিয়ে বললে—দেখে এসো তো পেকে দা, কে কাঁদচে?

 ভবানীও তাড়াতাড়ি দেখতে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে বললেন—ফণিকাকার বড় জ্যাঠাই জাহাজ-ডুবি হয়ে মারা গিয়েচেন, গণেশ খবর নিয়ে এল—

 তিলু বললে—ওমা, সে কি? জাহাজ-ডুবি?

 —হাঁ। সার জন লরেন্স বলে একখানা জাহাজ—

 —জাহাজের আবার নাম থাকে বুঝি?

 —থাকে বৈকি। তারপর শোনো, সেই সার জন লরেন্স জাহাজ ডুবেচে সাগরে, পুরীর পথে। বহু লোক মারা গিয়েচে।

 —ওগো এ গাঁয়েরই তো লোক রয়েচে সাত-আটজন। টগর কুমোরের মা, পেঁচো গয়লার শাশুড়ী আর বিধবা বড় মেয়ে ক্ষেন্তি, রাজু সর্দারের মা, নীলমণি কাকার বড় বৌদিদি। আহা, পেঁচো গয়লার মেয়ে ক্ষেন্তির ছোটো ছেলেটা সঙ্গে গিয়েচে মায়ের—সাত বছর মাত্তর বয়েস—

 গ্রামে সত্যিই একটা কান্নার রোল পড়ে গেল। নদীর ঘাটে, গৃহস্থদের চণ্ডীমণ্ডপে, চাষীদের খামারে, বাজারে, নালু পালের বড় মুদিখানার দোকানেও

২১১