—চলে যাচ্চি তো—
—ভবানী—
—কি?
—ভয়!
—কিসের ভয়? কোনো ভয় নেই—
এই সময়ে কোথায় আবার শাঁখ বেজে উঠলো। খোকা অভ্যাসমত তাড়াতাড়ি দু’হাত জোড় ক’রে কপালে ঠেকিয়ে বললে—দুগ্ গা দুগ্ গা, নম নম।
ভবানী হেসে বললেন—দ্যাখো বাবা, এবার দুর্গানামে যদি ভয় কাটে…
সত্যি দুর্গানামে ভয় কেটে গেল। বনবাদাড় ছাড়িয়ে পড়া আরম্ভ হয়ে গেল। ঘরে-ঘরে প্রদীপ জ্বলচে, গোয়ালে-গোয়ালে সাঁজাল দিয়েচে, সাঁজালের ধোঁয়া উঠচে চালকুমড়োর লতাপাতা ভেদ করে, ঝিঙের ফুল ফুটেচে বেড়ায় বেড়ায়।
ভবানী বললেন—ওই দ্যাখো আমাদের বাড়ি—
ঠিক সেই সময় আকাশের ঘন মেঘপুঞ্জ থেকে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলে। ঠাণ্ডা বাতাস বইলো। নিলু ছুটে এসে খোকাকে কোলে নিলে।
—ও আমার সোনা, ও আমার মানিক, কোথায় গিইছিলি রে? বৃষ্টিতে ভিজে—আচ্ছা আপনার কি কাণ্ড, ‘এই ভরা সন্দে মাথায়’ মেঘে অন্ধকার বনবাদাড় দিয়ে ছেলেটাকে কি বলে নিয়ে এলেন? অমন আসতি আছে? তার ওপর আজ শনিবার—
খোকা খুব খুশি হয়ে মায়ের কোলে গেল একগাল হেসে।
তারপর দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বিস্ময়ের সুরে বললে—কাণ্ড কাণ্ড!
আজ বিলুর পালা। রাত অনেক হয়েচে। তিলু লালপাড় শাড়ি পরে পান সেজে দিয়ে গেল ভবানীকে। বললে—শিওরের জানলা বন্ধ করে দিয়ে যাবো? বড় হাওয়া দিচ্চে বাদলার—
—তুমি আজ আসবে না?