ওকে হাত ধরে মুখ ফিরিয়ে বললেন—ছিঃ বিলু, ও কি? পাগলের মত কাঁদচ কে?
বিলু কাঁদতে কাঁদতে বললে—আমার মরণই ভালো সত্যি বলচি, আপনি পরম গুরু, এক এক সময় আমার মনে হয়, আমি পথের কাঁটা সরে যাই, আপনি দিদিকে নিয়ে, নিলুকে নিয়ে সুখী হোন।
—ও রকম কথা বলতে নেই, বিলু। আমি কবে তোমার অনাদর করিচি বলো?
—ও কথা ছেড়ে দিন, আমি কিছু বলচি নে তো আপনাকে! সব আমার অদৃষ্ট। কারো দোষ নেই—সরুন তো, খোকার ঘাড়টা সোজা করে শোয়াই—
ভবানী বিলুর হাত ধরে বললেন—হয়তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে বিলু। তখন বুঝতে পারি নি—
বিলু সত্যি ভবানীর আদরে খানিকটা যেন দুঃখ ভুলে গেল। বললে—না, অমন বলবেন না—
—না, সত্যি বলচি—
—খান একটা পান খান। আমার কথা ধরবেন না, আমি একটা পাগল—
এত অল্পেই বিলু সন্তুষ্ট! ভবানীর বড় দুঃখ হল আজ ওর জন্যে। কত হাসিখুশি ওর মুখ দেখেছিলেন বিয়ের সময়ে, কত আশার ফুল ফুটে উঠেছিল ওর চোখের তারায় সেদিন। কেন তার জীবনটা তিনি নষ্ট করলেন?
ইচ্ছে করে কিছুই করেন নি। কেন এমন হলো কি জানি!
বিলুকে অনেক মিষ্টি কথা বলেন সেরাত্রে ভবানী। কত ভবিষ্যতের ছবি একে সামনে ধরেন। তিনি যা পারেন নি, খোকা তা করবে। খোকা তার মা’দের সমান চোখে দেখবে। বিলু মনে যেন কোনো ক্ষোভ না রাখে।
মেঘভাঙা চাঁদের আলো বিছানায় এসে পড়েচে। অনেক রাত হয়েচে ডুমুর গাছে রাত-জাগা কি পাখী ডাকচে।
হঠাৎ বিলু বললে—আচ্ছা আমি যদি মরে যাই, তুমি কাঁদবে নাগর?
—ও আবার কি কথা?