হেসে বিলু খোকার কাছে এসে বললে—কেমন সুন্দর ছেয়ালা করচে দেখুন—স্বপ্ন দেখে কেমন সুন্দর হাসচে!…
সেবার পূজার পর বর্ষাশেষে কাশফুল ফুটেচে ইছামতীর দু’ধারে, গাঙের জল বেড়ে মাঠ ছুঁয়েচে, সকালবেলার সূর্যের আলো পড়েচে নাটা-কাঁটা বনের ঝোপে।
ছেলেমেয়েরা নদীর ধারে চোদ্দ শাক তুলতে গিয়েচে কালীপূজোর আগের দিন। একটি ছোট মেয়ে ভবানীর ছেলে টুলুর কাছে এসে বললে—তুই কিছু তুলতে পারচিস নে—দে আমার কাছে—
টুলু বললে—কি দেব? আমিও তুলবো। কৈ দেখি—
—এই দ্যাখ কত শাক, গাঁদামনি, বৌ-টুনটুনি, সাদা নটে, রাঙা নষ্টে, গোয়ালনটে, ক্ষুদে ননী, শান্তি শাক, মটরের শাক, কাঁচড়াদাম কলমি, পুনর্ণবা—এখন তুলবো রাঙা আলুরশাক, ছোলারশাক, আর পালংশাক-এই চোদ্দ। তুই ছেলেমানুষ, শাকের কি চিনিস্?
—আমায় চিনিয়ে দ্যাও, বাঃ—ও সয়ে দিদি—
অপেক্ষাকৃত একটি বড় মেয়ে এসে টুলুকে কাছে নিয়ে বললে—কেন ওকে ওরকম করচিস বীণা? ও ছেলেমানুষ, শাক চিনবে কি করে? আয় আমার সঙ্গে রে টুলু—
ফণি চক্কত্তির নাতি অন্নদা বললে—এত লোক জমচে কেন ও ওপারে? এই সকালবেলা?
সত্যিই, সকলে চেয়ে দেখলে নদীর ওপারে বহুলোক এসে জমেচে, কারো কারো হাতে কাপড়ের নিশেন। দেখতে দেখতে এপারেও অনেক লোক আসতে আরম্ভ করলে। অন্নদা ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটু বড়, সে এগিয়ে গিয়ে জিগ্যেস করলে—ও কাপালী কাকা, আজ কি এখেনে?
যারা জমেচে এসে তারা সবাই চাষী লোক, বিভিন্ন গ্রামের। ওদের অনেককে এরা চেনে, দু’দশবার দেখেচে, বাকি লোকদের আদৌ চেনে না। একজন বললে—আজ ছোটলাটের কলের নৌকো যাবে নদী দিয়ে—নীলকুঠির